X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনা হঠাৎ বেড়ে গেলো?

উদিসা ইসলাম
২৩ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:০৫আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ২১:৪২

সোমবার রাজধানীতে দুটি বাসের সংঘর্ষে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে সোমবার (২৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর পল্টনে যাত্রীবাহী দুই বাসের সংঘর্ষে মিজান কাজী (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাত যাত্রী। গতকাল বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাসের ধাক্কায় বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৮ বছরের শিশু সুমি খাতুনের। ২০ এপ্রিল মারা যান রাজধানীর কাওরান বাজারে দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে হাত হারানো রাজীব। ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় বনানীতে গৃহকর্মী রোজিনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বিআরটিসির একটি বাস; পা হারিয়ে তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একের পর এক বেশ কয়েকটি ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করেই কি বেড়ে গেল সড়ক দুর্ঘটনা?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা এদেশে অনেকটা মহামারীর মতো। তবে গত তিন মাসের পর্যালোচনা বলছে, দুর্ঘটনার ব্যাপকতা বেড়েছে। বর্তমানে পরপর কয়েকটি ঘটনায় এটি অনেক বেশি নজরে এসেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিচারের মুখোমুখি করতে না পারার কারণে এবং ক্ষমতাবানদের ছত্রচ্ছায়ায় চালকরা পার পেয়ে যাওয়ায় কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা।

সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাস বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্যমতে, সারাদেশে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার মাসেই এক হাজার ৭৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৮৪১ জনের মৃত্যু ও পাঁচ হাজার ৪৭৭ জন আহত হয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ২৮৮ জন। 

আগের বছর ২০১৭ সালে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাত হাজার ৩৯৭ জন। ২০১৬ সালে চার হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছিলেন। বিগত বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। নিহত ২২ দশমিক ২ শতাংশ এবং আহত ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানীতে শনিবার বাসচাপায় পা হারান রোজিনা যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যানবাহন রাস্তায় চলছে; যার ৭২ শতাংশের ফিটনেস নেই। অন্যদিকে, সারাদেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের হাতে। রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়া চলাচল করে। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, হতাহতের সংখ্যা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কয়েকমাসে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েছে। হাইওয়ে ও শহরের মধ্যে দুর্ঘটনার ধরণ-কারণ ভিন্ন। শহরের দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রথমেই বলতে হবে গণপরিবহনের কর্মীদের দায়িত্বহীনতার কথা। গণপরিবহনের যে মান থাকার কথা, তা নেই। যখন গণপরিবহন করপোরেট কালচার নিয়ে এগোবে, চালক ও বাস মানসম্পন্ন হবে, বাস চলাচলের জন্য স্পেশাল লেন থাকবে, তখন এ ধরনের দুর্ঘটনা হয় না। অথচ আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ নেই, মুনাফা বাড়ানোর জন্য চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালায়, ১৬ ঘণ্টা টানা বাস চালাচ্ছে, বেতন কাঠামোর ঠিক নেই। এরকম একটি বড় সিটিতে এ ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা চালানো হলে দুর্ঘটনা ঠেকানো যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার মতো আয়তনের দ্বিতীয় কোনও সিটি খুঁজে পাবেন না, যেখানে ৫০ কোম্পানি মুনাফার দিকে নজর দিয়ে পরিবহন  চালাচ্ছে। পরিকল্পিত বাস অপারেশনের অনুপস্থিতির কারণেই ঢাকায় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।’

সড়কে সমস্ত অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নগরীর প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ব্যবসা মূলত চালকরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। দৈনিক চুক্তিভিক্তিক ইজারায় মালিকরা তাদের বাস চালকের হাতে তুলে দেন। এ কারণেই চালকরা যাত্রী ধরার জন্য সড়কে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। গণপরিবহন পরিচালনায় এ ধরনের ব্যবস্থা আর কোনও দেশে নেই। এই অরাজকতা বন্ধ করা না গেলে নগরে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না।’ 

আইনের প্রয়োগ নেই উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়রম্যান কাজী রিয়াজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একের পর এক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও যখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তখন মানুষ শৃঙ্খলা হারায়। প্রতিটি দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় যদি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে কিছুটা সতর্কতা অবশ্যই আসতো। সেটি না হওয়াতেই আমাদের সড়কে অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের চাকায় রোজ মানবাধিকার পিষ্ট হচ্ছে।’

শনিবার বাসচাপায় পা হারানো রোজিনা খাতুন সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাসার গৃহকর্মী। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে ইশতিয়াক রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোজ রক্তাক্ত হচ্ছে রাজপথ। কারণ এখানে কোনও শৃঙ্খলা নেই, কেবল নৈরাজ্য। পরিবহন মালিকদের কেউ না কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা সব দলে আছে, তারা প্রভাবশালী। তারা কোনও আইন করতে দেয় না। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের কারণে শৃঙ্খলায় আসা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু হলে ধর্মঘট করে এরা সারাদেশ অচল করে দেয়। ফলে এখানে কোনও কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বার্থের কাছে এসে সব দল এক হয়ে যাচ্ছে।’

/ইউআই/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত