X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩৬ বছরেও হয়নি স্বতন্ত্র জাকাত বোর্ড

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৭ মে ২০১৮, ১১:২০আপডেট : ২৭ মে ২০১৮, ১৮:৪২

জাকাত (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

 সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করে তা হতদরিদ্রদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য ১৯৮২ সালের ৫ জুন এক অধ্যাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাকাত বোর্ড গঠন করা হয়। ওই ফান্ড পরিচালনার জন্য জাকাত বোর্ড গঠন করে সরকার। কিন্তু ৩৬ বছরেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি নিজস্ব জনবল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই চলছে এই বোর্ডের যাবতীয় কার্যক্রম। এছাড়া প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও নেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। এসব কারণে জাকাত বোর্ড স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরাই। 

জানা গেছে, বর্তমানে জাকাত বোর্ডের দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় বসেন এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরমধ্যে রয়েছেন একজন ‘পরিচালক’ পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি মূলত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেখভাল করছেন জাকাত বোর্ড। এছাড়া, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রয়েছেন ১ জন, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক ১ জন, নিম্নমান সহকারী কাম সহকারী হিসাবরক্ষক ১ জন, ক্যাশিয়ার ১ জন, টাইপিস্ট ১ জন ও  এলএমএসএস রয়েছেন ২ জন।

বর্তমানে এ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী, সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক। তিন বছরের জন্য বোর্ডের সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হলেও হয় না নিয়মিত বৈঠক। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্তের বাইরে বোর্ড সদস্যদের অভিমতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বোর্ডটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ সংগ্রহ করা হয়। জেলা কমিটির মাধ্যমে আদায় হওয়া অর্থের অর্ধেক সরাসরি জেলা জাকাত কমিটির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দরিদ্ররা সাহায্যের জন্য আবেদন করলে তা যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়। সেই আবেদন যাছাই-বাছাই করে অর্থ দিতে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন, দুস্থদের কর্মসংস্থান কার্যক্রম, জাকাত ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি, নওমুসলিম স্বাবলম্বীকরণ ও দুস্থ-গরিব রোগীদের চিকিৎসা বাবদ আর্থিক সহায়তা করা। জাকাত ফান্ডের একটা নির্ধারিত পরিমাণ অর্থে টঙ্গীতে জাকাত বোর্ডের অধীনে শিশু হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা সেবায় দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় ২৩টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাকাত ফান্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার যখন জাকাত ফান্ড গঠন করে তখন সাময়িকভাবে কাজ পরিচালনার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পৃথকভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়নি। বরং ১৯৮৭ সালের পর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনেই জাকাত বোর্ডের কাজ চলছে। জনবল সংকট তো আছেই। এছাড়া প্রচার-প্রচারণা ও অন্যান্য কাজের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। ফলে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।’

জাকাত ফান্ডের টাকা সংগ্রহ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ ও জাকাত ফান্ড বিভাগের পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি জাকাত ফান্ড নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে টাকা জমা নেওয়া হয়। এছাড়া জেলা কমিটিগুলোর মাধ্যমেও জাকাতের অর্থ নেওয়া হয়। এই অর্থ আয়করমুক্ত হওয়ায় অনেকে এ ফান্ডে টাকা দিয়ে থাকেন।’

জনবল সংকট প্রসঙ্গে মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ হলে জাকাত আদায় কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’

জাকাত ফান্ড পরিচালনায় জনবল সংকটের প্রভাব পড়ছে না বলে মনে করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে জনবল আছে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। তবে আরও বেশি জনবল থাকলে গতি বাড়বে। আমরা চেষ্টা করছি জনবল বাড়াতে। একইসঙ্গে জাকাত আদায়-বিতরণ কার্যক্রম বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

তবে স্বতন্ত্র বোর্ড না থাকায় জাকাত ফান্ডের কার্যক্রম গতিশীল হচ্ছে না বলে মনে করেন জাকাত বোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের অধ্যাদেশে পৃথক বোর্ড থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বোর্ডের মিটিং ঠিকমতো হয় না। কীভাবে জাকাত আদায়ের কার্যক্রম গতিশীল করা যায়, কীভাবে জাকাত বণ্টন সুষ্ঠু হয়, এসব বিষয়েও অভিমত নেওয়া হয় না।’

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ আরও বলেন, ‘জাকাত বোর্ড শক্তিশালী করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরর অধীনে না রেখে আলাদা বোর্ড করা জরুরি। অনেকবার বৈঠকে এসব কথা বলেছি, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জাকাত কার্যক্রম শক্তিশালী হলে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন সহজ হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।’

 

/এমএনএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত