রাজধানীর গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্যের সত্যতা উঠে এসেছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনটি দাখিল করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সালমা জাহান।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোড়ানের শেখ শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে সরকারের দেওয়া ২০১৮ সালের বিনামূল্যের সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ করেন মন্ত্রণালয়ে। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনি অর্থ আত্মসাতের পৃথক একটি অভিযোগও করেন।
পাঠ্যবই বিক্রি ও অর্থআত্মসাতের ঘটনায় শেখ শহিদুল ইসলামের অভিযোগের পর গত ২৪ এপ্রিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালককে অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন- শিক্ষা অফিসার ভবেন্দ্র নাথ বাড়ৈ এবং অডিট অফিসার মো. মোকলেছুর রহামান। অভিযোগের চার মাস পর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের গঠন করা তদন্ত কমিটি গত ৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাক প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪২৫ জন। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে বইয়ের চাহিদা দেওয়া হয় ৩ হাজার ৫৬০ সেটের। এর বিপরীতে বিতরণ করা হয় ২৯২ সেট। ১৩টি স্কুল গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ। সেই ১৩টি স্কুলের বিপরীতে ২ হাজার ৫শ ৫৬ সেট বই বিতরণ দেখানো হয়েছে। তারপরও ৫৭৯ সেট বই বিতরণের তথ্য দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।
এই দুই কর্মকর্তার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই গত ১৬ মে গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন মিলনকে বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি বই বিক্রির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। বিদ্যালয় থেকে ১০ হাজার সরকারি বই উদ্ধার হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক জামিনে মুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক যে ১৩টি বিদ্যালয়ে বই সরবরাহ করেছেন, সেসব বিদ্যালয়ে তদন্ত করে দেখেনি তদন্ত টিম। এমনকি বইয়ের বিনিময়ে টাকা নেওয়া হয়েছে কিনা তাও যাচাই করা হয়নি।
প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিকে জানান, গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৩টি স্কুল পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসব বিদ্যালয়গুলো হলো- সানলিট পাবলিক আইডয়াল স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা মডার্ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ, ন্যাশনাল ইউনিটি হাই স্কুল, আল রাজি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল বিদ্যা নিকেতন, মেধাবিকাল কিন্ডার গার্টেন অ্যান্ড কলেজ, প্রাইম স্কুল, ইস্টওয়েস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেরিট মডেল-ই- স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইডেন স্কুল, জাগরনী বিদ্যা নিকেতন এবং সেন্ট্রাল মডেল স্কুল।
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছর অতিরিক্ত চাহিদা দিয়ে বই নেওয়া হতো। বিতরণ না করে অনেক বই বিদ্যালয়ে রেখে দিতেন প্রধান শিক্ষক। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে সেসব পুরাতন বই উদ্ধার করেছিল।
এদিকে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বই বিক্রির অভিযোগের প্রমাণ মিললেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। অথচ আগের একটি তদন্ত কমিটি অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছিল। নতুন কমিটি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ না পাওয়ায় নতুন করে তদন্ত করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সালমা জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগের তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ বর্তমান তদন্তে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) নতুন করে তদন্তের জন্য প্রস্তাব দেবো।’
এর আগে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পায় মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিনামূল্যের বই বিক্রির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ