সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের সরকারি সম্মানী ছাড়া আর কোনও আয়ের উৎস নেই। তার দৃশ্যমান কোনও ব্যবসাও নেই। শনিবার রাতে গ্রেফতারের পর তাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা ও কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় র্যাব। রাতভর এ অভিযানে শুধুমাত্র পাঁচ কোটি টাকার চেক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে অভিযান শেষে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুরে তার বাসা এবং অফিসে তল্লাশি করেছি। সেখানে তেমন কিছু পাইনি। আমরা বুঝতে পেরেছি তার বাড়িতে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যেসব ডকুমেন্ট ছিল সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে তারই একজন সহযোগীর আত্মীয়ের বাড়ি থেকে একটি চেকবই উদ্ধার করা হয়েছে। বইটিতে দেখা গেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে একদিনে (তিনটি চেকের মাধ্যমে) পাঁচ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা এগুলো তদন্ত করে দেখছি, কোথায় টাকা জমা দিয়েছেন, টাকাগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এর আগে শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আবতাবউদ্দিন রোডে বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে সাতটি বিদেশি মদের বোতল, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ ৩৩ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্বের মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাতভর মোহাম্মদপুরে তার বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। আপাতত তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্জিত আয়ের উৎস এবং অর্থ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং এই অর্থ তিনি কোথায় খরচ করেছেন দেখা হবে। যদি এখানে মানিলন্ডারিংয়ের কোনও বিষয় থাকে তবে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজীবের সহযোগী এবং তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন আত্মীয় বা অনাত্মীয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তো আসলে তার বৈধ আয়ের কোনও কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তার যে একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে এ বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করে এনেছে। এসব সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত তার দৃশ্যমান কোনও ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। বর্তমানে সিটি করপোরেশন থেকে যে সম্মানী পান, সেটা তার একমাত্র প্রধান আয়। এছাড়া যে অবৈধ লেনদেনের বিষয়গুলো রয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে।’
আরও পড়ুন: র্যাবের অভিযানে কাউন্সিলর রাজীব গ্রেফতার, বিদেশি মদ ও পিস্তল উদ্ধার