X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ওমর শেহাবের সাক্ষাৎকার

‘ক্যান্টনমেন্টে প্রতিষ্ঠিত তিন দলের কোনও জনসমর্থন ছিল না'

উদিসা ইসলাম
৩১ জানুয়ারি ২০১৬, ০৭:১৪আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০১৬, ১৮:১৫

ওমর শেহাব ওমর শেহাব ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টিতে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে কয়েক বছর সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তার একাডেমিক আগ্রহ কোয়ান্টাম কম্পিউটেশনে এবং নন-একাডেমিক আগ্রহ বাকি সব বিষয়ে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম কী চোখে দেখছে তা নিয়ে তিনি watchingictwatchers.wordpress.com ব্লগে লেখালেখি করে থাকেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে অনলাইন সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনীতি, সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাম্প্রতিক যে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা বিএনপির সে বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কি?

মূল আঙ্গিকটি হচ্ছে বিএনপি’র গঠনতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার মূল ভিত্তি হিসেবে নেয়নি। কাজেই এর সম্মান রক্ষার সেই তাগিদটিই তাদের মধ্যে নেই। এর বাইরে কিছু খুচরো কারণ আছে বলে আমার মনে হয়েছে। যেমন-এগুলো করে আলোচনায় থাকা এবং পরবর্তীতে মৃতপ্রায় দলের নির্জীব সিনিয়র নেতাদের জায়গা দখল করার চেষ্টা করা। একটা জিনিস বুঝতে হবে, কোন মানুষ যখন জনসম্মুখে কোনও খারাপ কথা বলে তার মানে হল তার পারিবারিক, সামাজিক বা সাংগঠনিক বলয়ে এই কথা তিনি আরও বেশিদিন ধরে বলছেন। কাজেই বিএনপি'র কোনও নেতা যদি আজকে জনসম্মুখে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করে তার মানে হল তার সাংগঠনিক পরিধিতে তিনি আরও অনেকদিন ধরে কাজটি করে যাচ্ছেন।

আপনি কি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৪৫ বছরের মাথায় এসে কোনও দেশে এতো শক্তিশালীভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি দাঁড়াতে পারে? মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি শক্তিশালী পক্ষ দাঁড়িয়ে যাওয়ার পেছনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা আছে কি?

‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি’ কথাটি না বলে আমি ‘বাংলাদেশের পক্ষ বিপক্ষ শক্তি’ কথাটি বলার পক্ষপাতি। এটি তো ফুটবল খেলা নয় যে, আবাহনীর পক্ষ নেওয়া আর মোহামেডানের পক্ষ নেওয়া নৈতিকভাবে সমান। মুক্তিযুদ্ধের ও বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়া নৈতিকভাবে ভাল, আর বিপক্ষ নেওয়া নৈতিকভাবে খারাপ। প্রশ্ন হল, এটি তীব্র কেন? আসলে এটি খুব বেশি তীব্র নয়। মূলত: গণমাধ্যমগুলো তাদের রেটিং আর ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তীব্রভাবে দেখানোর চেষ্টা করে। এটি সত্যি যে, বাংলাদেশে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল (বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি) ও কিছু অনুসারী উপসংগঠন (যেমন আওয়ামী ওলামা লীগ) যাদের গঠনতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখা যাবে এই সংগঠনগুলোর কোনটাই কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের জনসমর্থন থেকে সৃষ্টি হয়নি। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সরকারের টাকা খরচ করে তৈরি, শুরু থেকে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীকে একজন অবৈধ শাসক আবার চালু করেছেন। এর অর্থ হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নীতি নিয়ে চলা এসব দলের আসলে কোন জনসমর্থন নেই।

মুক্তিযুদ্ধের বা বাংলাদেশের বিপক্ষ শক্তি আসলে খুব একটা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেনি। বিএনপি’র বেশিরভাগ ভোট যে আদর্শিক ভিত্তি থেকে নয় বরং অন্য দলের ওপর রাগের বহি:প্রকাশ তার প্রমাণ হল বিএনপি’র আন্দোলনে মানুষের সাড়া না পাওয়া। কারণ, তরুণ ভোটারদের মগজ কেউই জিয়াউর রহমানের তথাকথিত সততা আর খালেদা জিয়ার তথাকথিত আপোষহীনতা দিয়ে ধোলাই হয়নি। পাশাপাশি শাহবাগ আন্দোলনের কারণে এটি প্রতিষ্ঠিত যে, যে বা যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি,  তিনি বা তারা বাংলাদেশেরও বিপক্ষ শক্তি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিশালী পক্ষ দাঁড়িয়েছে এমন কিছু চোখে পড়ছে না।

মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশবিরোধী অংশ কথায় কথায় আস্ফালন দেখায়। এটাকে তারা সফলতা বলেও মনে করে। এর দায় কার ওপর বর্তাবে?

প্রথম দায় যারা বিরোধী তাদের ওপর। দ্বিতীয় দায় যেসব গণমাধ্যম ও অরাজনৈতিক সংগঠন নিরপেক্ষ আর সুশীল সেজে বিএনপি বা এ ধরনের বাকি দলগুলোর সঙ্গে এক টেবিলে বসে চা খেলেও কখনও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক বিরোধিতার ব্যাপারে প্রতিবাদ করে না তাদের।

ওমর শেহাব; ফটো ক্রেডিট: তানভীর মাহমুদ

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম নিয়ে জানতে চাই। এটা কিভাবে, কোন উদ্দেশ্যে তৈরি হলো এবং আপনি কবে থেকে কীভাবে জড়ালেন?

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম হল বিশেষজ্ঞ, কর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের একটি আন্তর্জাতিক সমবায়, যার মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা আর্ন্তজাতিক অপরাধ কমানো, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ও অপরাধের ভিক্টিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এটি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। আইসিএসএফ আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক প্রামাণ্যকরণ, প্রচারণা, মানুষকে সচেতন করা, গবেষণা ও শিক্ষাদানের কাজ করে থাকে। আমি মূলত: ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জড়িত। আমার যেহেতু আইনের ওপর কোন পড়াশোনা নেই, আমি মূলত: ডকুমেন্টেশন, হাউজকিপিং, আর্কাইভিং এসব কায়িক শ্রমের কাজ যথাযথ নেতৃত্বের অধীনে করে থাকি।

বর্তমান প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য য্থাযথ আর্কাইভ কি আমাদের আছে? তারা দিক-নির্দেশনা পাবে কোথা থেকে? এই জায়গার দুর্বলতা থাকলে যদি চিহ্নিত করেন

আমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে একটি পরিসংখ্যান দিতে পারি। আমাদের সরকারি লাইব্রেরিগুলোর এই অর্থবছরের বাজেট হল দুই কোটি ত্রিশ লাখ টাকা। আর গত বছর নাকি এক কোটি আটষট্টি লাখ মানুষ এই লাইব্রেরিগুলোতে এসেছে। তার মানে যারা লাইব্রেরীতে আসেন শুধু তাদের কথা ধরলে মাথাপিছু আমরা খরচ করছি এক টাকা সাঁইত্রিশ পয়সা। আমি আর ভয় পেয়ে দেশের মোট স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর কথা চিন্তা করতে মাথাপিছু খরচ কততে নেমে আসে সেই হিসেব করলাম না। প্রথম কথা হল সরকারের আমলাদের মাথায় এটি ঢুকতে হবে যে, আমাদের শিশুদের জন্য লাইব্রেরি বিলাসিতা নয়। লাইব্রেরি হল সমাজের জন্য অক্সিজেন। তাদের এটি বুঝতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকেও একটু সচেতন হতে হবে। ২০০৯ সালের খসড়া শিক্ষানীতিতে দুই জায়গায় বিশেষজ্ঞরা লাইব্রেরির কথা রেখেছিলেন। ২০১০ সালে যে নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে পাশ হয় সেখানে দেখা গেছে আমলারা দুই জায়গা থেকেই লাইব্রেরির কথা বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এটি নিয়ে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যম প্রতিবাদ করেনি। দেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা নির্লিপ্ত গণমাধ্যম থাকলে আমাদের তো মহাবিপদ!

/ইউআই/এমপি/এমএসএম/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ