X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে শামসুজ্জামান দুদু

খালেদা জিয়াকে অনুসরণ মানেই মুক্তিযুদ্ধকে অনুসরণ করা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২০:২৭আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:০২

শামসুজ্জামান দুদু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অনুসরণ করার মানেই মুক্তিযুদ্ধকে অনুসরণ করা বলে দাবি করেছেন দলীয় প্রধানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য  শামসুজ্জামান দুদু। তার মতে, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ-সংখ্যা এত ঠুনকো জিনিস নয় যে, বিষয়টিকে নিয়ে কেউ গবেষণা করতে পারবেন না, কথা বলতে পারবেন না। সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। 

বাংলা ট্রিবিউন: হঠাৎ করে বিএনপির চেয়ারপারসনসহ সিনিয়র নেতারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন নতুন প্রশ্নের অবতারণা করছেন। এর কারণ কী?

শামসুজ্জামান দুদু:  না এটা হঠাৎ করে যাচ্ছে ঠিক নয়। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। বরং মুক্তিযুদ্ধের যে মূল বিষয় যেটাকে আওয়ামী লীগ চেতনা বলে, চেতনার বাইরে তারা কোনও শব্দ আনে না। মুক্তিযুদ্ধের মুখ্য বিষয় হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র মানেই নির্বাচন। নির্বাচন মানেই ভোটাধিকার। এই জিনিসটা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। শেখ মুজিব পার্লামেন্টে পনেরো মিনিটের মধ্যে গণতন্ত্র বাতিল করেছেন, একদল প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই সময় সব রাজনৈতিক দল এমনকি আওয়ামী লীগকেও বাতিল করা হয়। তিনি একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। সেটি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ—সংক্ষেপে বাকশাল। তিনি সেটার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলই গণতন্ত্রের জন্য। দেশে বহুদল না থাকলে, বহুমত না থাকলে গণতন্ত্রও থাকে না। মাত্র চারটা সংবাদপত্র রেখে বাকি পত্রিকাগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। যে চারটি পত্রিকা রাখা হয়েছি, সেগুলোও  সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসা হয়েছিল।  
গণতন্ত্রের অন্যতম পিলার হচ্ছে সংবাদপত্র। সেটা সরকার নিজের কব্জায় নিয়ে আসে। এছাড়া, মানুষের মৌলিক অধিকারও  স্থগিত করা হয়েছি। দেশের আদালতকেও প্রেসিডেন্টের অধীনে নেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট যেকোনও সময় বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। কে বিচারপতি হিসেবে থাকবেন, কে থাকবেন না, তা প্রেসিডেন্টের অনুকম্পার ওপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ গণতন্ত্রের যে সিস্টেমটা, তা ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কেউ যদি অবস্থান নিয়ে থাকে, তাহলে আজ থেকে ৪০ বছর আগে আওয়ামী লীগ নিয়েছিল। সেটি আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান নেতা শেখ মুজিব নিয়েছিলেন। সেটা করেছিলেন সমাজতন্ত্রের বেশে। যে সমাজতন্ত্র দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে। লাখ-লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যান। ওই সময় প্রায় চল্লিশ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: মেজর জিয়াউর রহমান তার দেওয়া ঘোষণাতেই বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তিনি ঘোষণা করছেন। শেষ ঘোষণায় তিনি এ-ও বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে দল নির্বাচনে জিতেছে, জনগণের কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন এই দলের সরকার গঠনে জনগণ সমর্থন দেয়। জিয়াউর রহমান  নিজেই স্বীকার করেছেন স্বাধীনতা ঘোষণা বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী? 

শামসুজ্জামান দুদু:  শেখ মুজিব যদি ঘোষণা দিতেন, তাহলে তার পক্ষে অন্য কারও ঘোষণা করার কোনও অবকাশ ছিল না। শেখ মুজিবকে বিএনপি কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানের বিষয়ে অস্বীকার করেনি। শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। জিয়াউর রহমানের ঘোষণাই প্রমাণ করে যে, শেখ মুজিব তখন জেলে ছিলেন। জেলে যাওয়ার পরে জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেছেন। এছাড়া, ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়। সেক্টর কমান্ডাররা সে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুরের সরকার নয় এটা। ওই ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও সরকার ছিল না। যে কারণে ধরা হচ্ছে, বলা হচ্ছে,  প্রথম ঘোষণা ছিল জিয়াউর রহমানের সরকার প্রধান হিসেবে। সেজন্য অনেকে মনে করছেন, এই সময়ে তিনি ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট। আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্টের ঘোষণা আসে ১৭ এপ্রিল। সেখানে শেখ মুজিব কারাগারে থাকায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে। আবার সেজন্য মুজিবুরকে মুক্তিযুদ্ধে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মাওলানা ভাসানীকে মুক্তিযুদ্ধে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।  মনি সিংহ, আমাদের মোজাফফর সাহেব; তাদের অস্বীকার করা সুযোগ নেই। কারণ, সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধে কাজ করেছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কথা হচ্ছে। আপনারা ক্ষমতায় এলে শহীদ সংখ্যা নির্ণয়ে কোনও উদ্যোগ নেবেন? 

শামসুজ্জামান দুদু:  আমাদের দল থেকে এটা বলা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম সাহবে বলেছেন, আমরা একটা পরিসংখ্যান করছি। সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার শহীদ পরিবারকে ভাতা দেওয়া হয়। আমরা দাবি করছি, ৩০ লাখ শহীদ। বাকি ২৭ লাখ ২৫ হাজার শহীদের পরিবারকে ভাতা দিচ্ছি না। আমরা বলেছি, আমি নিজেও বলেছি, আমাদের উদ্দেশ্যটা হচ্ছে  বাকি ২৭ লাখ ২৫ হাজারকেও ভাতা  দিতে হবে।  এছাড়া,  আমরা যেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে পারি। এখানে আনুমানিক বলে কোনও কথা নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখের সংখ্যাটা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে বিএনপিতে?

শামসুজ্জামান দুদু:  না, না, না। এটা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মূলত সংখ্যাটা মুখ্য বিষয় না। আমাদের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। যারা বাংলাদেশে বাস করবেন, তাদেরই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, যিনি শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের একজন খালেদা জিয়া যিনি গ্রেফতার নির্যাতন সহ্য করেছেন মাছুম বাচ্চাদের নিয়ে। তার সততা নিয়ে কেউ যদি প্রশ্ন উত্থাপন করে এটাই অসততা। যেমন শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধা কিনা, এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে এটাই অসততা।  জিয়াউর রহমান, শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাসানী, মনি সিং, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী আমাদের পূর্ব পুরুষ। তারা আমাদের লড়াই করতে শিখিয়েছেন। তারা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার শিখিয়েছেন। তাদের রাজনীতি নিয়ে আমাদের বিভিন্ন রকম প্রশ্ন থাকতে পারে। কেউ গণতন্ত্রের পথে, কেউ সমাজতন্ত্র বা কেউ অন্য লাইনে থাকতে পারেন। সেটা আলাদা কথা। কিন্তু তারা যে জাতীয় নেতা এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। থাকতে পারে না। সেই জন্য ত্রিশ লাখ নিয়ে যারা কথা বলছেন, বরঞ্চ তারাই ধান্দাবাজি করছেন। খালেদা জিয়া মু্ক্তিযুদ্ধের অন্যতম পথিকৃত। তিনি যা কিছু করেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তা অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে মুক্তিযু্দ্ধকে অনুসরণ করা হচ্ছে। তাকে সম্মান জানানো মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানানো। তাকে বিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।

 ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এসটিএস/এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ