X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রধানমন্ত্রী সরে দাঁড়ালে সব বাধা দূর’

আদিত্য রিমন
০৩ অক্টোবর ২০১৮, ২২:০৮আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৪০

 

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, বরকতউল্লাহ বুলু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যকে গতানুগতিক বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে এই ধরনের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী এর আগেও দিয়েছেন। তার আজকের বক্তব্যে নতুন কিছুই নেই দাবি করে বিএনপি নেতারা জানান, তারা নির্বাচনে অংশ চান। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পথে প্রধানমন্ত্রীকে তারা বাধা মনে করছেন। ফলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ালেই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পথের বাধা দূর হবে। বুধবার (৩ অক্টোবর) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে কোনও দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, সে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে।’

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী এরআগেও দিয়েছেন। এটা গতানুগতিক, এতে কোনও নতুনত্ব নেই। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই বলেই ৭ দফা দাবি দিয়েছি।’     

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই কারণে, তিনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন৷ এখন সব দলের অংশ নেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা তার সরকারকেই করতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছেন৷ এখন তাকেই সংবিধান ঠিক করতে হবে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তিনিই সংবিধানের সংশোধনী এনে বাতিল করেছেন৷ এখন এই সমস্যার সমাধানও তাকেই করতে হবে।’

কোনও দল নির্বাচনে না এলে কিছুই করণীয় নেই—প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এ কথা বলে তিনি দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর করণীয় আছে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পথে তিনিই এখন প্রধান বাধা। সব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথেই তিনিই সব বাধার সৃষ্টি করেছেন৷ তিনি সরে দাঁড়ালে সব বাধা দূর হয়ে যাবে।’

আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রধানমন্ত্রীর করণীয় প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ গ্রহণ করুক, এটা যদি প্রধানমন্ত্রী চাইতেন, তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে যেসব দাবি এসেছে, সেগুলো মেনে নিতেন। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ৭ দফা দাবি দিয়েছে। আর যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা ৫ দফা দাবি দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আবারও ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। এ কারণেই রাজনৈতিক দলের দাবিগুলোর প্রতি কর্ণপাত না করে উল্টো সেইগুলো নিয়ে তিরস্কার করছে।   

উল্লেখ্য, বিএনপির ৭ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার,  জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে,  সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা, দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাবে ঘোষিত যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যের উল্লেখযোগ্য  দাবিগুলো হচ্ছে—একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য  লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, নির্বাচনের একমাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে আমাদের কিছু দাবি আছে। নির্বাচনকে ঘিরে সব রাজনৈতিক দলের একটি জাতীয় ঐক্য হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের দাবি আছে নির্বাচন অংশ নেওয়ার ব্যাপারে। এরমধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর যে নির্বাহী ক্ষমতা আছে, তা থাকতে পারবে না। এর বাইরে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা, বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ  সরকার গঠন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কারামুক্তিসহ তাকে নিয়ে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এই দাবিগুলো পূরণ হলে আমরা নির্বাচনে যাবো।’ 

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নতুন কিছু নেই। তিনি এর আগেও সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আশা করেছেন। কিন্তু সব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তার যেসব করণীয়, তা কিন্তু তিনি করছেন না ।

সমস্ত জাতি সব দলের অংশ গ্রহণে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চান না, সব দল অংশ নিক। তিনি  মুখে সব দলের অংশগ্রহণ করার আশা করলেও তার কর্মকাণ্ড বলে দিচ্ছে তার উল্টোটা। এজন্য তিনি এখনও সংসদ বহাল রেখেছেন। দলীয় লোকদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।’ এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে যেসব দাবি এসেছেন, তা মেনে নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

আরও পড়ুন:

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী



সাম্প্রদায়িক আচরণকারীরা বিকৃতমনা
জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই: শেখ হাসিনা
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
সব দলই নির্বাচনে আসবে: প্রধানমন্ত্রী
যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দেবো: প্রধানমন্ত্রী



 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত