X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এপিঠ-ওপিঠ

কামড় বসাতে পারে ‘আন্ডারডগ’ শ্রীলঙ্কা

খালিদ রাজ
২৫ মে ২০১৭, ২২:৪১আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ২২:৪১

দরজায় কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ১ জুন থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। ৮ দেশের এই উত্তেজনাকর লড়াইয়ের আগে কোন দলের কী অবস্থা, শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে থাকছে কে, কেনই বা ফেভারিট ধরা হচ্ছে তাদের- এই নিয়েই আমাদের বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে-

শ্রীলঙ্কা দুই দিনেও থামল না বৃষ্টি। কী আর করার, অগত্যা যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে হলো ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েডকে। কলম্বোর ১৫ বছর আগের বৃষ্টিমুখর দিন দুটি আশীর্বাদ হয়েই এসেছিল শ্রীলঙ্কার জন্য। কেন? প্রেমাদাসায় প্রথম দিনের ফাইনালে যা হোক মোটামুটি লড়াই চালানোর মতো স্কোর গড়তে পেরেছিল, কিন্তু দ্বিতীয় দিনের ফাইনালে ২২২ রানে ৫০ ওভার শেষ করার পর ভারতের দিকেই ঝুঁকে ছিল ম্যাচ। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি আরেকবার ঝুম ধারায় নামলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ভাগাভাগি হয় শ্রীলঙ্কা-ভারতের মাঝে।

সোনালী সেই দিনের ডানায় চেপে টানা দুইবার বিশ্বকাপ ফাইনাল পর্যন্ত যায় শ্রীলঙ্কা। আরও একবার ১৯৯৬ সালের ছোঁয়ায় ভেসে বেড়ানোর উপলক্ষও হয় তৈরি। কিন্তু ক্রিকেটদেবতা তাকান না মুখ তুলে। তাই ফাইনাল হারের যন্ত্রণা বুকে চেপে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয় লঙ্কান তরী। ভারত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জনের মাঝেও যেন মিশে থাকে দ্বীপ দেশটির মানুষের হাহাকার-আর্তনাদ। অতঃপর মুখ তুলে তাকান ক্রিকেটদেবতা। বিশ্ব টি-টোয়েন্টি শিরোপা জিতিয়ে উৎসবের রঙে ভরিয়ে দেন কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়াবর্ধনেদের।

বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শিরোপা এসেছে, ট্রফি জিততে না পারলেও বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা গেছে দুইবার। হয়নি শুধু আরেকবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ওঠা। ২০০২ সালে ঘরের মাঠের টুর্নামেন্টের পর ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের গত আসরেই কেবল শ্রীলঙ্কা যেতে পেরেছে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। চার বছর পর আবার সেখানেই শুরু হচ্ছে প্রতিযোগিতাটির নবম আসর। সাঙ্গাকরা-জয়াবর্ধনেদের বিদায়ের পর রং-রূপ হারানো লঙ্কানদের এবার সেমিফাইনাল পর্যন্তও ধরছেন না অনেকে! ‘অান্ডারডগ’-এর খাতায় লেখা হচ্ছে তাদের নাম। তাতে বয়েই গেছে শ্রীলঙ্কার! নিজেদের পারফরম্যান্সের জন্য এই তকমাতেই যেন খুশি তারা। ‘অনভিজ্ঞ’ দল নিয়েই শপথ নিচ্ছে তারা মাথা উঁচিয়ে ধরার।

যদিও তার জন্য দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। ‘বি’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ যে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘আন্ডারডগ’ হওয়ায় খুব বেশি কিছু হারানোও নেই শ্রীলঙ্কার। তবে কামড় বসিয়ে শিরোপা প্রত্যাশী যে কাউকে বিদায় করে দেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু আছে এই শ্রীলঙ্কার।

কেন্দ্রবিন্দু : ফিরেছেন লাসিথ মালিঙ্গা। এর চেয়ে স্বস্তির খবর আর কী হতে পারে শ্রীলঙ্কার জন্য। আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম করে জানিয়ে রেখেছেন- তিনি প্রস্তুত। তবে দুশ্চিন্তার একটা জায়গাও থেকে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার জন্য। ২০১৫ সালে নভেম্বরের পর আর কোনও ওয়ানডে ম্যাচ খেলেননি তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাঠে ফিরলেও ৪ ওভারের বেশি বল করতে পারেনি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছেন বলে। যদিও কে না জানে মালিঙ্গার মতো অভিজ্ঞ বোলার যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন নিজেকে। মালিঙ্কার সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ফিরেছেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। চোটের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন বাইরে। তাদের দুজনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে দলে রয়েছেন দিনেশ চান্ডিমাল, নুয়ান কুলাসেকারা ও উপুল থারাঙ্গার মতো খেলোয়াড়রা। এই কয়েকজনকে বাদ দিলে এই শ্রীলঙ্কাকে অনভিজ্ঞই বলতে হবে। নিরোশান ডিকবিলা ও লাকশান সান্দাকানের দুজনের মিলে ওয়ানডে খেলেছেন মোটে ১৭টি!

শক্তি : শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় শক্তি বোলিং। এক মালিঙ্গাই গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন ম্যাচের গতিপথ। আছেন অভিজ্ঞ কুলাসেকারা ও সুরঙ্গা লাকমালের মতো কার্যকরী বোলার। স্পিন আক্রমণে সান্দাকান ক্রিকেট বিশ্বে শ্রীলঙ্কার নতুন আবিষ্কার। তাদের সঙ্গে অধিনায়ক ম্যাথুজের বোলিংও রাখতে পারে কার্যকরী ভূমিকা। বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার নতুন ওপেনিং জুটিটাও গড়ে দিতে পারে পার্থক্য। দীর্ঘদিনের ওপেনিং সমস্যা কাটিয়ে তুলেছেন থারাঙ্গা-ডিকবিলা।

দুর্বলতা : ব্যাটিং নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা শ্রীলঙ্কার। রান পেলেও কোনও ব্যাটসম্যানই ধারাবাহিক নন। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজেই বেশ ভালোভাবে দেখা গেছে বিষয়টি। চান্ডিমাল কিংবা ম্যাথুজের ব্যাট না হাসলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো ব্যাটসম্যানের অভাবটা হয়তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও ভোগাবে লঙ্কানদের।

লাসিথ মালিঙ্গা নজরে থাকবেন : যে দলে মালিঙ্গার মতো বোলার আছেন, সেখানে আসলে অন্য কাউকে খোঁজার দরকার পড়ে না। যতই ওয়ানডে থেকে দেড় বছর বাইরে থাকুন না কেন, তার বোলিংয়ের সামনে যে কোনও ব্যাটসম্যানই ভুগবেন অস্বস্তিতে। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে শিরোপা জিতে সতেজ মনে নামতে যাচ্ছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তো শীর্ষে আছেনই, দেখা বিষয় হলো ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেটের মালিক এবার যান কতদূর।

নজরে রাখতে হবে চায়নাম্যান সান্দাকানকেও। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে ম্যাথুজ বলে এসেছেন, ‘সান্দাকান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে আমাদের জন্য। ও রহস্যময় এক বোলার, তাছাড়া অনেক দল তো এখন পর্যন্ত ওকে দেখেইনি।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবে পা রাখায় ‘অপরিচিতি’ বোলারের সুবিধাটা তিনি আদায় করে নিতে পারেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে।

স্কোয়াড : অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ (অধিনায়ক), দিনেশ চান্ডিমাল, উপুল থারাঙ্গা, নিরোশান ডিকবিলা, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, চামারা কাপুগেদারা, অসেলা গুনারত্নে, লাসিথ মালিঙ্গা, সুরঙ্গা লাকমাল, নুয়ান কুলাসেকারা, নুয়ান প্রদীপ, থিসেরা পেরেরা, লাকশান সান্দাকান, সেক্কুগে প্রসন্ন।

সেরা প্রাপ্তি : ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন (২০০২)।

প্রতিপক্ষ : দক্ষিণ আফ্রিকা (৩ জুন), ভারত (৮ জুন), পাকিস্তান (১২ জুন)।

/কেআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ