X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লাউয়াছড়ায় গাছ কাটা নিয়ে অসন্তোষ

সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
২২ জুন ২০১৬, ২০:০৪আপডেট : ২২ জুন ২০১৬, ২০:১৫


লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে রেললাইন সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে লাউয়াছড়ার ২৫ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবেশাবাদী ও সামাজিক সংগঠন।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে দিয়ে বয়ে যাওয়া রেলপথের দুই ধারের ২৫ হাজার গাছ কাটতে বন বিভাগকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি এলাকার রেলপথের ধারের চার শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। রেল লাইনের পাশে হাজার হাজার গাছ কাটা হলে বনাঞ্চলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে মনে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড অপারেটর রিজভী আহমদ জানান, এমনিতেই লাউয়াছড়া বন উজাড় হয়ে গেছে। যার ফলে বন্যপ্রাণীরা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে মারা পড়ছে। বর্তমানে লাউয়াছড়া পর্যটকশূন্য। আবার যদি রেললাইনের দু-পাশের হাজার হাজার গাছ কাটা হয় তাহলে লাউয়াছড়া বিপন্ন হবে। এতে আমাদের ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের নেতদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। একই কথা জানালেন লাউয়াছড়া ট্যুর গাইড ইউসুফ আলী, মো. আব্দুল আহাদ।
লাউয়াছড়ার চশমা চোখ বানর বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আ স ম ছালেক সোহেল বলেন, লাউয়াছড়ার রির্জাভ ফরেস্টের এতগুলো গাছ কাটার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কিভাবে নিল। সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখা রেলওয়ে বিভাগ দিতে পারেনি। তিনি বলেন, যদি বনের গাছ কাটা হয় তাহলে পরিবেশ বিপর্যয় ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়বে।

রমজানের পরে তারা লাউয়াছড়া নিয়ে কঠোর আন্দোলন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আল্টিমেটামের ডাক দিয়েছেন।

মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, একদিকে লাউয়াছড়া বনের ভেতর দিয়ে সড়ক পথ, রেলপথ, বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির কয়েকশ বন্যপ্রাণী পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে গাছ চুরির কারণে লাউয়াছড়া বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এখন যদি লাউয়াছড়া রেললাইনের দুই পাশের ২৫ হাজার গাছ কাটা হয় হয় তাহলে বন্যপ্রাণী প্রজনন ক্ষেত্র মারাত্মক ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদের পরে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।

ঢাকার মডেল অভিনেতা ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফ লাউয়াছড়া ঘুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একটি দেশের মানুষ জানতে হবে প্রকৃতি ও পশু পাখির সঙ্গে কেমন আচরণ করে। রেল বিভাগের এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে লাউয়াছড়ার বনের বিলুপ্ত প্রায় চশমাপরা হনুমান কি টিকে থাকতে পারবে। প্রতিবছর অসংখ্যা দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে লাউয়াছড়া বন দেখতে। বনের এই সব প্রাণী বনের গাছ না থাকলে এরাও থাকবে না। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের নিষ্ঠুর ব্যবহারে বিদেশি পর্যটকদের মনে নেতিবাচক ধারণা আসবে। পর্যটকশূন্যতা দেখা দেবে। দেশের রাজস্ব আয়ের অন্যতম এই সেক্টর বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘রেললাইন মুক্ত লাউয়াছড়া চাই! এটাই হোক স্লোগান।’

লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে রেললাইন
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, দেশে বনজসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এত সমৃদ্ধ বন আর কোথাও নেই। ফলে লাউয়াছড়ার গাছগুলো কাটা হলে পরিবেশ ভারসাম্য হারাবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চিঠি দেওয়ার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় রেল চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। গাছ কাটার বিষয়ে দুই বছর আগে থেকে লেখালেখি হয়েছে। তিনি বলেন, রেল চালাতে হলে বৃহত্তর জনস্বার্থে এ গাছগুলো কাটতে হবে। বন বিভাগ এগুলো না কাটলে রেলওয়ে কেটে ফেলবে। তিনি বলেন, কাটা গাছের সংখ্যা ২৫ হাজার হবে না। এখানে বন বিভাগ একগুঁয়েমি করছে।

এ দিকে রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাউয়াছড়া বনের সংযুক্ত রাজকান্দি রেঞ্জের সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে রেলপথের দুই পাশে দুই কিলোমিটার এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা সম্পন্ন হয়েছে। কমলগঞ্জের রাজকান্দি রেঞ্জ অফিসের অ্যাটাস্ট অফিসার আবদুল আহাদ জানান, রেলপথের দুই কিলোমিটার এলাকায় সামাজিক বনায়নের প্রায় ৫ হাজার গাছ কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মাগুরছড়া এলাকায় প্রায় ৪০০ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বন আইনে বিধি মোতাবেক এসব গাছ কাটা হয়েছে। এতে পরিবেশের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।

প্রসঙ্গগত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মো. আরমান হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-সিলেট রেলপথের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ২৯৩/১ থেকে ২৯৮/১ কিলোমিটারের পাহাড়ি এলাকায় ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ও ভেঙে রেলপথের ওপর পড়ছে।

এতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ও যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটতে পারে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঝড়ে ৩০-৩৫টি গাছ রেলপথের ওপর ভেঙে পড়ে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের ৭ এপ্রিল রাতে ঝড়ে আরও ৩০টির মতো গাছ রেলপথের ওপর পড়ে। এতে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ইঞ্জিনের একটি হেডলাইট ভেঙে যায় ও ট্রেনটি আটকা পড়ে।

এ অবস্থায় উদ্যান এলাকার রেললাইনের উভয় পাশের ন্যূনতম ৫০ ফুট পর্যন্ত গাছ কাটতে হবে। না হলে পরবর্তী সময়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দ্য রেলওয়েজ অ্যাক্ট ১৮৯০-এর ১২৮ ধারা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


/এফএস/এজে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অভিবাসী কর্মীদের জন্য আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ হবে: প্রতিমন্ত্রী
অভিবাসী কর্মীদের জন্য আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ হবে: প্রতিমন্ত্রী
কেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
কেন স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
কিংসের বিপক্ষে ফাইনালের পাঁচ রেফারি নিয়ে আপত্তি মোহামেডানের 
কিংসের বিপক্ষে ফাইনালের পাঁচ রেফারি নিয়ে আপত্তি মোহামেডানের 
লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট কাল
লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট কাল
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’