X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে সিভিল এভিয়েশনের পিপিপি’তে রাডার ক্রয়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে বাতিল

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৫৪আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:১২

রাডার

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে রাডার ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলো সিভিলি এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ আর্থিক প্রস্তাব অত্যধিক ব্যয়বহুল ও অতিরঞ্জিত হওয়ায় তা বাতিল করে দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এর বদলে সরকারি অর্থায়নে রাডার স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সিভিল এভিয়েশন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে পিপিপির মাধ্যমে মাল্টিমোড সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (রাডার) স্থাপনের জন্য একটি আর্থিক প্রস্তাবনা সিভিল এভিয়েশন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। এতে দর উল্লেখ করা হয় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর কাজটি দেওয়ার কথা ছিল করিম অ্যাসোসিয়েটসকে। কিন্তু, এই দরকে ‘অত্যধিক’ ও ‘অতিরঞ্জিত’ উল্লেখ করে প্রস্তাবটি বাতিল করে দিয়েছে বিমান মন্ত্রণালয়। গত ১২ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে সিভিল এভিয়েশনকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১২ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান জাকিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি (স্মারক নং- ৩০.০১৮.০১৪.০৩.০০.০০৩.২০১৪ (অংশ)-৫০২) সিভিল এভিয়েশনে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ণ কমিটির পর্যালোচনায় প্রকল্পে সুপারিশকৃত দর অত্যধিক প্রমাণ হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে ‘প্রোকিউরমেন্ট গাইডলাইন ফর পিপিপি প্রোজেক্টস, ২০১৬’-এর ৪৫.৯সি (২)-এর অনুচ্ছেদ মোতাবেক দরপত্রটি গ্রহণযোগ্য নয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।’

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, বিশ্বের সব বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি), এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম) ব্যবস্থা বাধ্যতামূলকভাবে ২০১৭ সালের মধ্যে যুগোপযোগী করতে বলা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের গাইডলাইনে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার স্থাপন, ওয়াইড এরিয়া মাল্টি ল্যাটারেশন (ডব্লিউএএম) ও এডিএস-বি স্থাপন, এটিএস সেন্টার আপগ্রেডসহ এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে প্রকল্প হাতে নেয় সিভিল এভিয়েশন। রাডার স্থাপন প্রস্তাব ছিল এরই অংশ।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকেই রাডার স্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়চেষ্টাসহ নানা কারণে বারেবারেই প্রকল্পটি হোঁচট খাচ্ছে। আর এই দুর্নীতির সঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের একটি পক্ষ এবং করিম এসোসিয়েটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বার বার ওই প্রতিষ্ঠানটির দরপত্রকেই বাছাই করতে গিয়ে এবং সুবিধাভোগীদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে গিয়ে গত ৫ বছরে এই প্রকল্পের ব্যয় দেড় হাজার কোটির টাকারও বেশি বাড়িয়ে দেখানো হয়। ফলে ২০১১ সালে যে করিম অ্যাসোসিয়েটস রাডার ক্রয়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, ২০১৬ সালে সেই প্রতিষ্ঠানেরই দর প্রস্তাব দেখানো হয় এক হাজার ৭শ’ কোটি টাকা।

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, রাডার ক্রয়ে দুর্নীতির বিষয়টি এতটাই তীব্র ছিল যে ২০০৭ সালে ডেনমার্ক এবং ২০১৩ সালে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এতে অর্থায়ন করতে চেয়েও দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে তা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু বছর বছর দরপত্র আহ্বান আর তা পেছানোর প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। গত দশ বছরে একাধিকবার রাডার ক্রয়ের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হলেও এই প্রকল্প কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। 

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৫ সালে পিপিপির মাধ্যমে রাডার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পর দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে এ কাজের জন্য নির্বাচন করা হয় সেই করিম অ্যাসোসিয়েটসকেই। কিন্তু, প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব গিয়ে ঠেকে এক হাজার ৭শ’ কোটি টাকায়। এই বিপুল বাজেটকেই সিভিল এভিয়েশনের যোগ্যতা নিরীক্ষণ ও কারিগরী মূল্যায়ণ কমিটি গ্রহণ করে তা অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।কিন্তু, দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং বেসরকারি খাতের মাধ্যমে রাডার স্থাপনের ঝুঁকি বিবেচনা করে তা বাতিল করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এর পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে রাডার স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে জানতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মন্ত্রণালয় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে রাডার ক্রয়ের প্রস্তাব বাতিল করেছে। এখন মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে তার ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নেবে সিভিল এভিয়েশন।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচ এম জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাডার স্থাপন প্রকল্প এখন আর পিপিপি’তে হবে না। সরকারি অর্থায়নেই হতে পারে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত দেখে সব কিছু ঠিক করা হবে। এখন এটি স্থাপনে কত টাকা ব্যয় হবে সেটি নতুন করে পর্যালোচনা করে ঠিক করা হবে।

/সিএ/টিএন/

আরও পড়ুন: রসরাজের আড়াই মাসের জেলজীবন

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ