X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া শিল্পের ঠিকানা বদলেছে, বদলায়নি পরিবেশ

শফিকুল ইসলাম, সাভার থেকে ফিরে
২২ মার্চ ২০১৭, ১০:১৫আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৭, ১৭:৪৫

সরেজমিন সাভার ট্যানারি পল্লি-৪

পার্থক্য কেবল নামেই। কিন্তু পরিবেশগত দিকে থেকে ট্যানারি শিল্পের পুরনো আস্তানা হাজারীবাগের সঙ্গে নতুন ঠিকানা সাভারের হরিণধরা গ্রামের চিত্র একই। হাজারীবাগে চামড়া কারখানার পরিত্যক্ত বর্জ্য ফেলে রাখা হতো যত্রতত্র। ওই এলাকায় ঢুকলেই নাকে আসত বোঁটকা গন্ধ। এখন ঠিক একই পরিবেশ বিরাজ করছে সাভারের হরিণধরা গ্রামে। এখানকার চামড়া শিল্প নগরীর ভেতরে ঢুকলেও নাকে আসবে চামড়ার সেই পঁচা-বোঁটকা গন্ধ। আর রাস্তাতেও এখানে-ওখানে দেখা মিলবে পরিত্যক্ত বর্জ্যের।

এখানকার প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর একটি পুকুরসদৃশ উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা হচ্ছে চামড়ার ছাঁট বা কঠিন বর্জ্য এবং তরল বর্জ্য। হাজারীবাগের তরল বর্জ্য ফেলা হতো বুড়িগঙ্গায়। আর এখন সাভার ট্যানারি পল্লীর বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে। হাজারীবাগের আশপাশ দিয়ে গেলে যেমন নাক চেপে ধরে দৌড়ে পালাতে হতো, সাভারের অবস্থাও এখন একই। চামড়ার গন্ধে সাভারের হেমায়েতপুর, ঝাউচর ও হরিণধরা গ্রামের মানুষ এখন অতিষ্ঠ।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সরেজমিনে সাভার চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শনকালে চোখে পড়ে এমনই দৃশ্য।

চামড়া শিল্পের ঠিকানা বদলেছে, বদলায়নি পরিবেশ

সাভার হেমায়েতপুরের ট্যানারি পল্লি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ট্যানারি পল্লির উত্তর ও দক্ষিণ পাশের সীমানা ঘেঁষে খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে ট্যানারির কঠিন বর্জ্য। এর মধ্যে রয়েছে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার মাথার চামড়া, শিং, লেজ ইত্যাদি। এগুলো বহন করা হচ্ছে চারদিক আটকানো খোলা ভ্যানে করে। আর এগুলো নিয়ে ফেলে রাখা হচ্ছে ট্যানারি পল্লির দক্ষিণ প্রান্তের সীমানা ঘেঁষা খোলা জায়গায়। সেখান থেকে সেগুলো টেনে নিয়ে যাচ্ছে কাক ও কুকুর। ফলে সেগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে এখানে-ওখানে।

জানতে চাইলে এ্যাপেক্সে ট্যানারির ভ্যান চালক সুমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিনই এভাবে আমরা কারখানার কঠিন বর্জ্য সেখানে নিয়ে ফেলে দেই। এটাই আমার ডিউটি।’ প্রতিদিন এই কারখানার ৮ থেকে ১০ ভ্যান বর্জ্য সেখানে ফেলা হয় বলে জানান সুমন।

শুধু এ্যাপেক্সই নয়, সাভার চামড়া শিল্প নগরীর যে কয়টি কারখানা ওয়েট ব্লু তৈরি করছে, প্রতিটি কারখানা থেকেই এভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা জায়গায়। এ নিয়ে বলার কেউ নেই।

চামড়া শিল্পের ঠিকানা বদলেছে, বদলায়নি পরিবেশ

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাভার চামড়া শিল্প নগরীর প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মঈনুদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। এক সময় তো স্থানটি ভরে যাবে। তখন কী উপায় হবে? এসব বর্জ্য এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তিনি রাজি থাকলে এসব বর্জ্য আমিন বাজারে নিয়ে যাওয়া হবে।’ আনিসুল হক রাজি না হলে কী হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ থাকেন তিনি।

সাভার চামড়া শিল্প নগরীর সীমানা ঘেঁষেই রয়েছে বেসরকারি আবাসিক কোম্পানি যমযম সিটি। সিটিতে রয়েছে যমযম সিটি মসজিদ, মাদ্রাসা ও গ্রাম। প্রথম দিকে যমযম সিটির সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেই এসব বর্জ্য ফেলা হতো। এখানেই ট্যানারি পল্লির জন্য ডাম্পিং স্টেশন তৈরির জায়গা রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, এখানে ডাম্পিং স্টেশন করতে জমির বরাদ্দ রাখা হয়েছে পাঁচ বিঘা। ওই জমিতে তৈরি করা হয়েছে বড় আকারের একটি পুকুর। এই পুকুর এখন ভরে গেছে ট্যানারির বর্জ্যে। এখানে ফেলা কঠিন বর্জ্য এবং ঝিল্লির অংশ গড়িয়ে পড়ছে পানিতে। এ কারণে যমযম সিটি মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র ও মসজিদের মুসল্লিদের সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে তাদের এখন চলাচলই দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েও কাজ হয়নি। থানায় অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। বিসিককে এ বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও তারা তা আমলে নেয়নি। গ্রামবাসীরা বলছেন, প্রতিবাদ করলে উল্টো কারখার লোকজন এসে হুমকি দেয়।

চামড়া শিল্পের ঠিকানা বদলেছে, বদলায়নি পরিবেশ

হরিণধরা গ্রামের বাসিন্দা ছালাম মাদবর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে বাপ-দাদার ভিটা। আমরা এই ভিটাকে শেষ আশ্রয়স্থল ভেবে আসছি। কিন্তু এখন মনে হয় এই ভাবনা ছাড়তে হবে। দিনে দিনে ট্যানারি কারখানা বাড়তে থাকবে। আর ট্যানারি বাড়লে ময়লাও বাড়বে, গন্ধও বাড়বে।’ ‘আমরা তাহলে বাঁচবো কিভাবে’— প্রশ্ন রাখেন ছালাম।

তিনি বলেন, ‘এ গন্ধ তো সহ্য করার মতো নয়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) প্রেসিডেন্ট আবু নাসের খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর মূল কারণ ছিল হাজারীবাগ এলাকার পরিবেশ রক্ষা করা। কিন্তু ট্যানারি সাভারে সরিয়েও পরিবেশের জন্য লাভ হয়নি। হাজারীবাগের বাসিন্দাদের মতো এখন সাভারের বাসিন্দারা ভুগছেন। এর প্রভাবে সেখানকার মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। তারা এখন নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হবেন। এ অবস্থার পরিত্রাণ হওয়া জরুরি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সাভার ট্যানারি পল্লী পুরোপুরি চালু হয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। সেটি একটি আধুনিক চামড়া নগরী হবে। সবকিছুই হবে আধুনিক। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/টিআর/এসটি/

আরও পড়ুন: ধলেশ্বরীর বাতাসে দুর্গন্ধ, জীবন অতিষ্ঠ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা