চলে এসো
ভুল ভেঙে গেলে এসো একাকী
নির্জন এ দিঘির ঘাটে
হিজলের হৃৎপিণ্ডে বসে যে পাখি
মুহুর্মুহু বেদনার শিস কাটে—
তার সাথে না হয়
আনমনে কাটালে কিছুটা সময়!
মৌনতায় ম্রিয়মাণ সারাটা প্রহর
চাও যদি মুখরিত হোক
ছেড়েছুঁড়ে মেকি ওই বিষণ্ন শহর
খোঁপাতে গুঁজে নিয়ে পাখির পালক
চলে এসো কুঞ্জবনে—
এ কবির হৃদয়ের গহিন নির্জনে!
শরতকাব্য
আনকোরা শাড়ির আঁচলের মতো আকাশ
স্বপ্ন-সুতোয় ঠাঁসবুনটে নীল সমুদ্র আঁকা
দিগন্তজুড়ে কাশকন্যার সচকিত উদ্ভাস
শরতে এসে ষড়ঋতুর চাকা
থমকে গেছে শিউলিতলায় এসে—
শিশির-ভোরের সোহাগ মেখে মৌনব্রতে
মমতায় তুলে তারার মতো শুভ্র কোমল ফুল
কবিতা নামের কুসুমকুমারী যৌবনস্রোতে
ভাসিয়ে কবির ঘর-গেরস্থি, একূল-ওকূল
গিয়েছে আজ নীরবে ভালবেসে!
এসেছে শরৎ—সুদূরের পথে হৃদয় পরিব্রাজক—
মেঘের মহলে ফের আমাদের হঠাৎ দেখা হোক!
ব্যবধান
কাছে থেকেও কেউ কেউ
সুদূরের ছবি আঁকে
কিছু প্রেমের সুর মেলে না
ব্যবধান কিছু থাকে!
কাজল-ঢাকা চোখের মেঘে
ঝড়ের পূর্বাভাস
কিছু হাসির মাঝেও থাকে
লুকানো সর্বনাশ!
নিয়তি এমন; না যায় রোখা
না যায় মুছে ফেলা—
আমায় নিয়ে সর্বদা তাই
তোমার পাশা খেলা!
আল মাহমুদ
অকৃতজ্ঞ সময়ের আগ্রাসী অন্ধকার থেকে
অনন্ত আলোর পথে শুরু হলো যাত্রা অন্তহীন
ডানায় অভিমানের ক্ষত নিয়ে অমলিন
আকাশে উড়ে গেল নিঃসঙ্গ পাখি; রেখে
গেল অতিলৌকিক একগুচ্ছ পালকের ওম—
আমাদের কবিহিংসা, কাব্যহিংসা—মিথ্যে অহম
ক্ষমা করে দিও হে রত্নগর্ভ ‘কালের কলস’
তোমার মাহাত্ম্য ঠেলে উপরন্তু ঢেলেছি আক্রোশ
আমরা অবোধ অতি—নালায়েক—গ্রহণে অক্ষম
তথাপিও হৃদয়-ভাণ্ডারে সযতনে আজীবন করে জমা
দুই হাতে বিলিয়েছ প্রাণদায়ী সুপুষ্ট কাব্যের খুদ
সব নাম পায় না কো কবির উপমা
তুমিই ব্যতীক্রম শুধু—আল মাহমুদ!
ব্যর্থ প্রস্তুতি
সময় থমকে আছে
জরাজীর্ণ রাজবাড়ির দেয়ালে টাঙানো
হরিণের মাথার খুলির ভেতর বন্ধ ঘড়ির
পেণ্ডুলামের মতো স্থির হয়ে আছে প্রতিটি প্রহর
অথচ অনেক কাজ পড়ে আছে
আমার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে বসন্তের মাতাল
হাওয়া; পলাশের পাপড়িগুলো গালে রঙের চূড়ান্ত আঁচড়টাও
থামিয়ে দিয়ে মুখ ভার করে বসে আছে
'তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে...'
রবিঠাকুরের গানের লাইন গাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে
সূর্যাস্তের আবীর মাখিয়ে যে রমণী প্রতীক্ষায় আছে
তার পিঠে পিঠ লাগিয়ে সঙ্গোপনে
আমারই বসার কথা ছিল আজ গোধূলিতে
অথচ সময় থমকে আছে—
জানালার শিকে আটকে থাকা
মৃত প্রজাপতির শীতল চোখের মতো
স্থির হয়ে আছে আমার প্রতিটি প্রস্তুতি!