X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশা বাড়ছে ছুটিতে আসা মালয়েশিয়া প্রবাসীদের

চৌধুরী আকবর হোসেন
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:০০আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:১৬

করোনাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসেন অনেক প্রবাসী (ফাইল ছবি)

মালয়েশিয়া থেকে কেউ সাত আবার কেউ আট মাস আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। তিন-চার মাসের ছুটি শেষে আবার ফিরে যাবেন কর্মস্থলে, এমনটাই কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে মালয়েশিয়ায় বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের আর ফেরা হয়নি। কবে উঠবে নিষেধাজ্ঞা, কবে তারা ফিরতে পারবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই অনিশ্চয়তায় হতাশা বাড়ছে ছুটিতে আসা মালয়েশিয়া প্রবাসীদের।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ হয় মার্চে। পরবর্তীতে জুলাই মাসে শর্ত সাপেক্ষে ট্রানজিট যাত্রী ও মালয়েশিয়ার রেসিডেন্স পারমিটধারী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে ও দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কয়েকটি এয়ারলাইন্স ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটে ফ্লাইট শুরু করেছে। 

তবে ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মালয়েশিয়া হাই কমিশন জানিয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশসহ ২৩ দেশের রেসিডেন্স পারমিটধারী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।  

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা মালয়েশিয়া প্রবাসীরা সংগঠিত হচ্ছেন। ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে ছুটিতে আসা প্রবাসীদের ফিরে যেতে সরকারি উদ্যোগ এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ, সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার দাবিতে তারা এ মানববন্ধন করবেন। এর আগে জুনে প্রায় ৫০০ জন মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মন্ত্রীকে দেওয়া হয়।

মানববন্ধন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা রুবেল ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাহলে আমরা কর্মহীন হবো না। পাশাপাশি মালয়েশিয়া প্রবেশের অনুমতি দিলে যেন সরকার সবাইকে দ্রুত সময়ে ফিরে যেতে সহায়তা করে তারও দাবি জানাই। এজন্য আমরা মানববন্ধনের কথা ভাবছি, তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

মালয়েশিয়ায় কনস্ট্রাকশনের কাজ করতেন যশোরের মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের বিপদের সীমা নেই। বাজার-ঘাটে যাওয়া বাদ দিয়েছি। কারও কাছে কিছু চাইতেও পারি না। সবাইতো ভাবে বিদেশ ছিলাম, কিন্তু আমি কী সংকটে সেটা তো কেউ জানে না।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, নভেম্বর পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ আছে। খুব চিন্তায় দিন কাটছে, ঘরে মা অসুস্থ, তার চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তা। ওষুধের খরচ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছি। দেশে এসেছিলাম দুই মাসের ছুটিতে, কিন্তু পার হয়ে গেছে পাঁচ মাস। হাতের জমানো টাকাও শেষ। দেশে যে কোথাও কিছু করবো তারও সুযোগ পাচ্ছি না। 

আবারও কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় মো. শিকদার। তিনি বলেন, যে অবস্থা, তাতে আর কোনও আশা দেখছি না। আমি শুক্রবার রাতে মালয়েশিয়াতে আমার মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তারা বললো আমাদের দেশের করোনাভাইরাসের অবস্থা ভালো না দেখে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশিদের যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না।

এদিকে ভিসার মেয়াদ ১৪ জুলাই শেষ হয়ে গেছে রুবেল ভুইয়ার। মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা রুবেলের এখন দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়। আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় কোনোভাবে চলছি বলে জানান তিনি। রুবেল বলেন, খুব অল্প সময়ের জন্য এসেছিলাম। এত লম্বা সময় যে  আটকা পড়বো, তা তো জানতাম না। ছোট ভাই, বাবা-মা, স্ত্রী নিয়ে সংসার। পরিবারের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে, কিন্তু আমি এখন কী করবো, বুঝে উঠতে পারছি না।

৫ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে আসেন রুবেল, ২৯ এপ্রিল তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। রুবেল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, রেমিট্যান্স আসলে সবাই কত খুশি। কিন্তু দেশে এসে আটকা পড়া প্রবাসীরা কী অবস্থায় আছে তা তো কেউ দেখছেন না।

যশোরের জিল্লুর রহমান ৩ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন। ২ এপ্রিল তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। জিল্লুর বলেন, অসুস্থতার কারণে দেশে চলে এসেছিলাম, বন্ধুদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার করে দেশে আসি চিকিৎসার জন্য। বন্ধুরা এখন টাকা চাইবে কী, তারা তো বুঝতে পারছে আমি বিপদে আছি। পরিবারের অবস্থাও খুব খারাপ। বেকার হয়ে বাড়িতে আছি। টেনশনে আছি, কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ধার-দেনা করে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম, ধার-দেনা মোটামুটি শোধ করে চার বছর পর দেশে ফিরেছিলাম। এখন ভবিষ্যতে কিছু যে করবো, তারও কোনও নিশ্চয়তা দেখছি না।

অপর এক মালয়েশিয়া প্রবাসী মোস্তফা কামাল বলেন, কার দুঃখের কথা কার কাছে বলবো। ছুটিতে এসে দীর্ঘ ৮ মাস বেকার। এখন কেমন করে কী হবে, বুঝতে পারছি না। সংসারে তো আর কোনও আয়ের রাস্তা নেই। আমাদের খোঁজ নেওয়ারও কেউ নেই বলে আফসোস করেন তিনি।

/টিটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তাপ কমাতে সড়কে প্রতিদিন ৪ লাখ লিটার পানি ছিটাচ্ছে ডিএনসিসি
তাপ কমাতে সড়কে প্রতিদিন ৪ লাখ লিটার পানি ছিটাচ্ছে ডিএনসিসি
ঢামেকে কারাবন্দি হাজতির মৃত্যু
ঢামেকে কারাবন্দি হাজতির মৃত্যু
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…