X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসানচরের পথে দ্বিতীয় ধাপে রওনা হয়েছেন ১৮০৪ রোহিঙ্গা

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৩০আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৪৮

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের পথে উখিয়া থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আনা হয়েছে বাস।

কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে প্রথমে রোহিঙ্গাদের নিয়ে রওনা দেয় ১৩টি বাস। এরপর ধাপে ধাপে মোট ৫১টি বাসে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য ওঠেন মোট ১৮০৪ জন রোহিঙ্গা। এছাড়াও তাদের মালামাল নিয়ে গেছে আরও কিছু ট্রাক। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আজ রাতে তারা চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তাদের জাহাজে তোলা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন।

দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকেই উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় ভাসানচরে যাওয়ার তোড়জোড়। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বাসে করে নিয়ে এসে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিবন্ধনের কার্যক্রম চলে। এরপর এখান থেকেই বাসে চেপে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন তারা।   

ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

এর আগে (৪ ডিসেম্বর) শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসিমুখে পৌঁছেছিল। আগের দিন ভাসানচরে যেতে আগ্রহী এসব রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে গত বৃহস্পতিবার গাড়িতে এনে চট্টগ্রামে শাহিন স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। এবারও সেভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের। 

এ বিষয়ে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে মোট ৫১টি বাস চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। ৪২৮টি পরিবারের ১৮০৪ জন রোহিঙ্গা বাসে উঠেছেন। চট্টগ্রামের এই ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বড় বড় জাহাজে আগামীকাল মঙ্গলবার তারা ভাসানচরে যাবেন। ’

বাসে উঠে ভাসানচরের পথে রওনা দিচ্ছে একটি রোহিঙ্গা পরিবার।

সকালে সরেজমিনে টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দেখা গেছে, ‘সোমবার সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পে বাস আসে। সিআইসি কার্যালয়ে প্রক্রিয়া শেষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় তাদের স্বজনরা আশেপাশে ভিড় করে। এর আগে তাদের মধ্যে অনেকের স্বজন প্রথম দফায় ভাসানচরে পৌঁছেছিল। পরে বাসে করে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে এদিনই তারা ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই ক্যাম্প থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।’

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি এবং টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, ‘তার শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ১০০ রোহিঙ্গা ভাসানচরে উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। সকালে তারা ক্যাম্প থেকে উখিয়ায় রওনা দিয়েছেন। এর আগে এ শিবির থেকে ২১ পরিবার ভাসানচরে পৌঁছেছিল।

ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হতে গাড়িতে উঠেছেন এক রোহিঙ্গা।

পরিবারসহ ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রাকালে টেকনাফ শামলাপুরের মো. জাহেদ হোসাইন বলেন, ‘কেউ আমাদের জোর করেনি। নিজেদের ইচ্ছায় আমরা পুরো পরিবার ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। তাছাড়া ভাসানচরে যারা আছে তারা অনেক ভালো আছেন বলে ফোনে জানিয়েছেন। তাই আমরা উন্নত জীবনের আশায় সেখানে যাত্রা দিচ্ছি।’

সবচেয়ে ছোট সন্তান খোলে নিয়ে ভাসানচরে যাত্রার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন মো. হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে আমি ভাসানচরে চলে যাচ্ছি। সেখানে নিরাপত্তাসহ সকল ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত এখানকার চেয়ে। তাই আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেখানে চলে যাওয়ার। তাছাড়া ভাসানচরের চলে যাওয়া লোকজন অনেক সুন্দর জীবনযাপন করছে।’

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, ‘তার শিবির থেকে ২৫ পরিবারের ১০০ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে উদ্দেশে উখিয়া রওনা দিয়েছে। আজ সেখান থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে তাদের ভাসানচরে পৌঁছার কথা রয়েছে।’

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) খোরশেদ আলম খান জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলটি ভাসানচরে পৌঁছাবে। স্বেচ্ছায় আসা এসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে হস্তান্তরের বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ’

প্রসঙ্গত, ভাসানচর দ্বীপটি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!