X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজবন্দিদের প্রথম একুশ

উদিসা ইসলাম
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:১০আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:১৬

বছর পেরোলেও ১৯৫২ সালের একুশের সৈনিকেরা তখনও কারাবন্দি। অমর একুশের প্রথম স্মৃতিবার্ষিকী উদযাপন করেছিলেন কীভাবে তা নিয়ে ১৯৭৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্মৃতিচারণ করেন ফজলুল করিম। প্রথম শহীদ দিবস নিয়ে তিনি বলছেন, ১৯৫৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দোতলায় ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যে কয়জন নিরাপত্তা বন্দি তখনও আটক ছিলেন, তারা হলেন অধ্যাপক অজিত গুহ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অলি আহাদ, পাবনার আব্দুল মতিন এবং টাঙ্গাইলের শামসুল হক। ফজলুল করিম এ কয়টা নামই মনে করতে পেরেছিলেন।

স্মৃতিচারণে বলছেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওয়ার্ডে বসে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি কীভাবে পালন করবো, তা নিয়ে দিনের কর্মসূচিও মোটামুটি ঠিক করা হয়। ঠিক হলো, আমরা সকলে একুশে ফেব্রুয়ারি উপবাস করবো, কালোব্যাজ ধারণ করবো এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবো। জেল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হলো যে আমাদের উপবাসের দরুন সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাওয়া বাবদ যে অর্থ বেঁচে যাবে তা যেন রাজবন্দিদের সাহায্য তহবিলে নগদ জমা দেওয়া হয়। সব ঠিক ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল কালো কাপড় নিয়ে। কোথায় পাওয়া যাবে ওটা? দিনের বেলায় মনে পড়লে, বাইরে থেকে কোনওভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু রাতে কারাগারে বন্ধ প্রকোষ্ঠে বসে এর সুরাহা করার পর খুঁজে পেলাম না।’

কালো ব্যাজ যোগাড় হয়েছিল

ফজলুল করিম লিখছেন, ‘আমাকে নোয়াখালীতে আটক করার সময় পরনের কালো ব্যাজটি আমার সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত করে জেলগেটে রেখে এসেছিলাম। পরে আমাকে ঢাকায় আনা হলে সেটি সেখানেই রয়ে যায়। পরে চিঠি লিখে সেই ব্যাজ ঢাকা কারাগারে আনা হয়েছে বটে, কিন্তু সেটি ভেতরে আনার নিয়ম ছিল না।

ব্যাজের ব্যবস্থা করেছিলেন অজিত গুহ। অজিতদার একজোড়া কালো সিল্কের মোজা ছিল। একেবারে মিশকালো। তিনি তার একটি মোজা কেটে ব্যাজ তৈরি করেছেন সবার জন্য।’

রাজবন্দিদের মুক্তি চাই

“সকাল হতেই নাজিমুদ্দিন রোড ধরে আসতে থাকে ছোটবড় মিছিল। কালো পতাকা দোতলা থেকে আগেই দেখা যেত। মিছেল কাছে আসলে সবাই বের হয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিলে ওপাশ থেকে আরও দ্বিগুণ জোরে ওরা বলতো রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। তখনকার দিনে জেলখানা পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় সব মিছিলের স্লোগান ছিল রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।”

মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন রাজবন্দিরা
 

“বংশাল ও চকবাজারের দিক থেকে ছোট-বড় মিছিল যাচ্ছে। নাজিমুদ্দিন রোড দিয়ে মিছিলের কালো পতাকাগুলো দোতলা থেকে আমরা আগেই দেখতে পেতাম। একটা কালো পতাকার ব্যবস্থা করেছিলাম। মতিন সাহেবের একটা কালো গাউন ছিল। সেটাকে কালো পতাকা বানিয়েছিলাম। মিছিল দেখলে দোতলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে যেতাম। মাজারের সঙ্গে জেলখানার পাঁচিলের মাঠ ঘুরে মুনির ভাই স্লোগান দিতেন। আমরা সবাই তাতে গলা মেলাতাম। মুনির ভাইয়ের দ্বরাজ গলা ছিল। যে যতো জোরে সম্ভব চিৎকার করে স্লোগান দিতাম। আমাদের কণ্ঠ শুনে বাইরে মিছিলের স্লোগান আরও তীব্রতর হতো। এভাবে বিকাল পর্যন্ত জেলখানার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছে মিছিল। সেদিন স্লোগানে স্লোগানে জেলখানার একাংশ কাঁপছিল। আমাদের জেল কর্তৃপক্ষের কেউ বাধা দিতে সেদিন সাহস পায়নি। মনটা খুব ছটফট করতো বাইরে যাওয়ার জন্য। সন্ধ্যায় অজিত গুহ রবীন্দ্রনাথ থেকে ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কিত রচনার নির্বাচিত অংশ পাঠ করলেন। এভাবেই আমরা ’৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কারাগারে বসে পার করলাম।”

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী