X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

পতাকা সেই যে উড়েছিল, আজও উড়ছে

উদিসা ইসলাম
০২ মার্চ ২০২১, ০০:০৩আপডেট : ০২ মার্চ ২০২১, ২৩:৪২

১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরুই হয়েছিল প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের নাম নিয়ে। শোষকদের হঠকারিতায় বিক্ষুব্ধ ঢাকা নগরীতে এই দিনে (২ মার্চ) পালিত হয় সর্বাত্মক হরতাল। বাঙালি প্রস্তুত ছিল ঘরে ঘরে। শতশত মিছিলে মুখরিত হয়েছিল সারা শহর। প্রত্যেকের মুখে এক স্লোগান, একই শপথ— ষড়যন্ত্র আর নয়, বাঙালি রুখে দাঁড়াও। পরাধীনতা আর নয়, চাই স্বাধীনতা চাই মুক্তি। ‘বিক্ষোভে উদ্বেল সেই দিনগুলো’ শিরোনামে ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলায় একটি সিরিজ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে  ১৯৭১ এর অগ্নিঝরা দিনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়। সেখানে এই দিনে বাংলাদেশের পতাকা বাংলার আকাশে ওড়ার কথা জানানো হয়।

আজ  ২ মার্চ। জাতীয় পতাকা দিবস। একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ছাত্রসভায় বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষিত হয়। এই সভা থেকেই ছাত্রসমাজ সেদিন সর্বপ্রথম উড়িয়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। সেই যে পতাকা উড়েছিল— তা আর নামেনি। তাইতো আজ সগর্বে উড্ডীন রয়েছে সেই পতাকা বাংলাদেশে। রক্ত দিয়েছে, বহু বহু রক্ত, তবু সেই পতাকা প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশের মানুষ।

বঙ্গবন্ধুর ডাক

মার্চের এক তারিখের পর থেকে ছয় দিন টানা কর্মসূচি ছিল। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আগে প্রতিবাদ রূপ নিচ্ছিল সম্মিলিত প্রতিরোধের। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এর এইদিনে ডাক দিলেন, সারা বাংলাদেশে হরতাল পালনের। ঘোষণা করলেন কর্মসূচি। এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু হুঁশিয়ার করে দেন— বাংলাদেশে যদি একবার আগুন জ্বলে ওঠে, তাহলে সে আগুনে চক্রান্তকারীরা ভস্মীভূত হয়ে যাবে। এ ধরনের নির্যাতনমূলক ও হঠকারিতাপূর্ণ পন্থা থেকে বিরত থাকার জন্য জনতার প্রতি তিনি আহ্বান জানান। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখাকে তিনি বাঙালির প্রতি অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করেন।

দৈনিক বাংলা, ৩ মার্চ ১৯৭৩

 

জনতা সেদিন কারফিউ মানেনি

ইয়াহিয়া চক্র বাধা দিয়েছে সেদিন প্রাণপণে। রক্ত ঝরিয়েছে ঢাকার রাজপথে। তবু বীর বাঙালি এগিয়েছে। এদিন থেকেই শুরু সর্বাত্মক আন্দোলনের। জঙ্গি মিছিলে মিছিলে স্লোগানের বজ্রনিনাদে প্রকম্পিত হয়েছে ঢাকা নগরী। এইদিনে বেলা পৌনে ১১টায় ফার্মগেটে গুলিবর্ষণ ও বেয়নেট চার্জে কমপক্ষে ৯ জন হতাহত হযন। রাত ৯টা থেকে জারি করা হয় কারফিউ। জনতা কারফিউ মানেনি। ব্যারিকেড তুলেছে সর্বত্র। সান্ধ্য আইন জারি করে বেপরোয়া গুলি চালালো সামরিক জান্তা। তাতে আবারও অনেকের প্রাণ ঝরলো। দৈনিক বাংলা অফিসের কিছু দূরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রইলো এক তরতাজা কিশোর। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আজিজ মোর্শেদ (২২) শহীদ হলেন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলো অনেককে। তাদের মধ্যে মামুন তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের  সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, মো. হারুনুর রশিদ বাচ্চু ফার্মগেট ইসলামিয়া স্কুলের ছাত্র, আলী হোসেন শ্রমিক ও বাস্তুহারাদের স্বেচ্ছাসেবক, কারওয়ান বাজার রেল লাইনের পার্শ্ববর্তী বস্তির বাসিন্দা নুরুন্নবী ও চান মিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা আর কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর বলেন। কিন্তু তাদের নামধাম জানা যায়নি। সারারাত ধরে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ হলো, আর সেই শব্দ ছাপিয়ে গোটা শহর থেকে শোনা যাচ্ছিল— বাঙালির প্রচণ্ড ধ্বনি।

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল