X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

রোগী বাড়ছে, হাসপাতাল প্রস্তুত তো?

জাকিয়া আহমেদ
২১ মার্চ ২০২১, ১১:০০আপডেট : ২১ মার্চ ২০২১, ১৫:০২

দেশে ১৮ থেকে ১৯ মার্চ করোনায় মারা গেছেন ১৮ জন। শনাক্ত এক হাজার ৮৯৯ জন। ১৯ মার্চ করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে। করোনা রোগী প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।

শীতের সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থাকলেও রোগী শনাক্তের হার ছিল নিম্নমুখী। ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯২ শতাংশ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল দুই দশমিক ৬৮ শতাংশ, ১৯ ফেব্রুয়ারি দুই দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে শীতের শেষে আবার বাড়তে শুরু করেছে রোগী।

১ মার্চ থেকে শনাক্তের হার চার শতাংশের ওপরে যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে তিন থেকে চার শতাংশের ভেতর ছিল। ৭ মার্চের পর থেকে বাড়তে থাকে এবং বেড়েই চলেছে।

১৭ মার্চে শনাক্তের হার ছিল সাত দশমিক ৬৮ শতাংশ। ১৬ মার্চে আট দশমিক ২৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ১০ হাজার ৪৩৭টি। এই মুহূর্তে ভর্তি আছে দুই হাজার ৫২২ জন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রয়েছে ৫৫৮টি। রোগী ভর্তি আছেন ২৮৫ জন।

তবে রাজধানী ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ১০টি সরকারি হাসপাতালের দুই হাজার ৩৮১টি শয্যার মধ্যে রোগী এক হাজার ৫৪২ জন। শয্যা ফাঁকা রয়েছে ৮৩৯টি। এই হাসপাতালগুলোর ১১৭টি আইসিইউর মধ্যে রোগী আছেন ৮৫ জন।

অধিদফতরের তালিকাভুক্ত নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৮৬৩টি, যার মধ্যে রোগী ৩৬৮ জন। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৬৪টি আর রোগী আছেন ১২০ জন।

করোনা ডেডিকেটেড একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েকদিনে রোগী বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এবারকার রোগীদের জটিলতা বেশি এবং দ্রুত তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জানুয়ারির শেষের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডটি আর রাখা হবে না। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রোগী বাড়তে শুরু করেছে।

সংক্রমণ কমে আসতে থাকায় সরকার ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যাও কমিয়ে আনে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বলে কিছু রাখা ঠিক নয়, তাতে নন-করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি হয়।

এদিকে বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএস মিলনায়তনে আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে সেগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেসব জায়গায় রোগীর উৎপত্তি হচ্ছে সেই জায়গাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে লাখ লাখ লোককে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাবে না। হাসপাতালে জায়গা হবে না। এতো সিট আমাদের নেই, কোনও দেশেই থাকে না।

‘রোগী খুবই আগ্রাসীভাবে বাড়ছে’-বললেন সিলেটের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক। তার মতে, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে তাদের হাসপাতালে ভীষণ চাপ পড়বে।

‘গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। ১২ শয্যার আইসিইউতে ১২ জন রোগী। ওয়েটিং লিস্ট বাড়ছে। হাসপাতালের জনবল যা ছিল, সেটা কিছুদিন আগেও বেশি মনে হচ্ছিল। রোগী কমে যাবে-এ ধারণা থেকে চিকিৎসকদের অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলিও হয়েছেন। সেখান থেকে তাদের আবার আনা কঠিন, কিন্তু রোগীতো বাড়ছেই ‘ হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোস্টার নিয়েও রীতিমতো অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, বলেন তিনি।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ঢাকার ভেতর কেবল পরিপূর্ণভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড দুই রোগীরই চিকিৎসা হয়। কিন্তু এখনই দেখা উচিত, সামনে যে ঢেউ আসছে তা সামলানোর মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে কিনা। কুর্মিটোলাতে যে পরিমাণ নার্সিং স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেককে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তাছাড়া টিকাদান কার্যক্রমের জন্য এই দুই হাসপাতালেই একটা বড় সংখ্যক জনবল নিয়োজিত। এসবের কারণেও রোগী ম্যানেজমেন্ট কঠিন হয়ে গেছে বলে জানান ওই চিকিৎসক।

হাসপাতাল ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটর সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগী বাড়ছে এবং আরও বাড়বে। এখনই হাসপাতালের সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ বাড়াতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেনসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালের প্রস্তুতি আগের তুলনায় ভালো থাকার কথা। তবে গত বছরে যেসব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোকে আবার একই পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত।’

রোগী বাড়ছে, তাই হাসপাতালের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেই রোগী ভর্তি রয়েছে। অন্যান্য হাসপাতালে বেড ফাঁকা। রোগী বাড়লে ঢামেক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হবে।

/জেএ/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিসিসিআইর গাইডলাইন অমান্য করেও শাস্তি পেলেন না জাদেজা
বিসিসিআইর গাইডলাইন অমান্য করেও শাস্তি পেলেন না জাদেজা
রাশিয়ার কাছে প্রথম স্বীকৃতি পেলো তালেবান
রাশিয়ার কাছে প্রথম স্বীকৃতি পেলো তালেবান
বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ: হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৮৬
বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ: হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৮৬
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জাতীয় নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত: বাংলাদেশ এলডিপি
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জাতীয় নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত: বাংলাদেশ এলডিপি
সর্বাধিক পঠিত
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল