X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

এখন মানসম্মত বিদ্যুৎ দেওয়াই আসল কাজ

ড. ইজাজ হোসেন
০৮ এপ্রিল ২০২১, ২০:১৮আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০০:৪৩
মহামারির কারণে জমকালো আয়োজনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান হয়তো হচ্ছে না, তবে বাংলাদেশি হিসেবে ৫০ বছর পেরিয়ে আসায় আমাদের গর্বের ও আনন্দের তিল পরিমাণ কমতি নেই। ৫০ বছরে আমাদের এত অর্জন যে, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ সুপরিচিত নাম। দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। এই অর্জন দেশের প্রতিটি মানুষের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। আর এগিয়ে যাওয়ার এই সময়টায় বিশেষ অবদান রেখেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
 
১৯৭১ সালের স্বাধীন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট। দেশের সব বড় শহরেই বিদ্যুৎ ছিল না। আবার যে শহরে ছিল, সেখানে কিছু মানুষ বিদ্যুৎ পেতো, কিছু ছিল না পাওয়ার দলে। ৫০ বছরে আমরা শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি।

৫০ বছর নেহায়েত কম সময় নয়। কিন্তু যদি প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকাই, তবে জানতে পারবো, ভারতের মতো দেশও এখন পর্যন্ত শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারেনি। সুতরাং এ নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি।

আজ আমরা প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ক্যাপটিভে আরও ৩-৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি অনেক। কিন্তু এটাই সব নয়। আমাদের দেখতে হবে মূলত চাহিদা কত। বিদ্যুৎকেন্দ্র করে রেখেছি আমরা। সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদনও করতে পারছি।

২০০৫ সাল আমাদের উৎপাদন ছিল ৪৫০০ মেগাওয়াট। ১৫ বছরের অর্জন আরও ১৫ হাজার মেগাওয়াট। নিঃসন্দেহে গত ১৫ বছরে আমরা উৎপাদন ভালো একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি।

আগে আমরা অনেক কম দামে বিদ্যুৎ পেতাম। তখন প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রকৃত দাম দিতাম না। এখন প্রকৃত দামটা দিতে হচ্ছে। কারণ, আমাদের জ্বালানি আমদানিও করতে হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আবার এটাও ঠিক, সরবরাহ ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। লোডশেডিং এখন নেই বললেই চলে।

১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারছি এখন। আগে ৬০০০ মেগাওয়াট দেওয়াটাই কষ্টের ছিল। তবে এখন মূল কাজ হচ্ছে মানসম্মত বিদ্যুৎ দেওয়া। এটা করতে পারলে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এতে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে ওগুলোকে গ্রিডে নিয়ে আসা যাবে। মাতারবাড়ি ও পায়রাতে আমরা যে পাওয়ার হাব করতে যাচ্ছি, এটিও এই সময়ের একটি বড় অর্জন।

অপরদিকে জ্বালানি খাতে ২০০০ সাল পর্যন্ত আমাদের সফলতা দারুণ। বিবিয়ানার মতো বড় গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গিয়েছিল এই সময়। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে গত ২০ বছরে জ্বালানি ক্ষেত্রে অর্জন তেমন নেই। একটি অনিশ্চয়তার দিকে চলে গেছি। বাধ্য হয়েই আমদানিতে ঝুঁকেছি।

তবে পরিস্থিতি খারাপ নয়। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করতে পারছি সহজে। দামও খুব বেশি নয়।

এখন জ্বালানি খাতের উন্নয়নে চারটি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করি। প্রথমত, জ্বালানির দক্ষতা বাড়াতে হবে, যাতে আমাদের জ্বালানি কম লাগে। দেশীয় গ্যাসের এক্সপ্লোরেশন বাড়াতে হবে, নিজস্ব গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং সব দেশের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

এরই মধ্য দিয়ে যদি আঞ্চলিকভাবে বিদ্যুতের আদান-প্রদানের আলোচনাটা এগিয়ে নিতে পারি, সেটাও কাজে আসবে। নেপাল, ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও একটি বড় ঘটনা।

তবে কিছু ঘাটতি আছে। সেগুলো অতিক্রম করতে পারলে আগামী বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতই পারবে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে।

পরিচয়: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, বুয়েটের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত)।

/এফএএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
সর্বাধিক পঠিত
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে