X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জর্ডানে অস্থিরতার নেপথ্যে সৌদি আরব?

বিদেশ ডেস্ক
১২ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৮আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪১

জর্ডানে কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিরতার নেপথ্যে সৌদি আরবের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে। তবে রিয়াদের তরফ থেকে জোরালোভাবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার এখানেই ইতি ঘটছে না।

এক সপ্তাহ আগে জর্ডানের জনপ্রিয় সাবেক যুবরাজ এবং বাদশাহ আব্দুল্লাহর সৎ ভাই প্রিন্স হামজাকে গৃহবন্দি করা হয়। তার বিরুদ্ধে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।

প্রিন্স হামজার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, তিনি বিভিন্ন গোত্রের নেতাদের সঙ্গে বেশকিছু বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এসব বৈঠকে তিনি তার সৎ ভাই বাদশাহ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে খোলামেলা বক্তব্য দিয়ে তার সমালোচনা করেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, প্রিন্স হামজা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোত্রের নেতাদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। এ ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই তদন্ত চলছিল। এক পর্যায়ে তাকে গৃহবন্দি করার পাশাপাশি মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাদশাহ আবদুল্লাহর একজন উপদেষ্টা এবং রাজপরিবারের একজন সদস্য রয়েছেন। উচ্চ পর্যায়ের এসব লোকদের গ্রেফতারের ঘটনাকে ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত’ বলে উল্লেখ করা হয়। জর্ডানে অস্থিরতার নেপথ্যে সৌদি আরব?

প্রিন্স হামজার বক্তব্য

গৃহবন্দি হওয়ার পর প্রিন্স হামজা বিবিসি-র কাছে দুইটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। ওই ভিডিওতে তিনি তার দেশের সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হয়রানির ভয়ে দেশের লোকজন এসব বিষয়ে কথা বলতে ভয় পায়।

রাজপরিবারের ভিন্নমতাবলম্বী এই সদস্য বলেন, গত ১৫-২০ বছরে প্রশাসন যেভাবে ভেঙে পড়েছে, সরকার কাঠামোয় যে অদক্ষতা ও দুর্নীতি দেখা গেছে তার জন্য তিনি দায়ী নন। তার ভাষায়, ‘জনগণ যে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে তার জন্যও আমি দায়ী নই।’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কেউ কথা বলতে পারে না, নিগ্রহ-হুমকি-হয়রানি-গ্রেফতারের শিকার না হয়ে কেউ কোনও মত প্রকাশ করতে পারে না।’

ভিডিওতে প্রিন্স হামজা বলেন, দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই গোপন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে থাকতে হয়।

বাদশাহ আব্দুল্লাহর এক চাচার মধ্যস্থতার পর এই সংকট পরে আর খুব বেশি দূর গড়াতে পারেনি। তবে এই ঘটনার পেছনে সৌদি আরবের ভূমিকার বিষয়ে জল্পনা কল্পনা জোরালো হতে থাকে।

সৌদি আরবের সমর্থন

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে উড়ে যান। সৌদি আরবের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ এবং তার সরকারের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানাতেই তাদের এই সফর।

সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, এতো ছোট একটি প্রতিবেশী দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি একবারেই অর্থহীন।

তাহলে এই ঘটনায় সৌদি আরবের আসলে কি ধরনের ভূমিকা থাকতে পারে? সংকট যখন চরমে উঠে সে সময় জর্ডানের কর্মকর্তারা জানান যে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো প্রিন্স হামজাসহ আরও বহু কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডের ওপর কয়েকদিন ধরে নজর রাখছিল।

কারও নাম উল্লেখ না করে তারা রহস্যময় কিছু বিদেশি শক্তির কথা বলে আসছিল যারা দেশটিতে ও রাজপরিবারের ভেতর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে প্রিন্স হামজা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের বিশ্লেষণ

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, এখানে দুইটি আলাদা বিষয় রয়েছে। একটি বিষয় হচ্ছে প্রয়াত বাদশাহ হুসেইনের জনপ্রিয় জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রিন্স হামজা, সম্প্রতি যিনি বিভিন্ন গোত্রের ক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে জর্ডানের নিরাপত্তা প্রধানদের নাড়া দিয়েছেন। আর অন্য বিষয়টির সঙ্গে বেশকিছু কর্মকর্তা জড়িত যাদের বিরুদ্ধে অন্তত একটি বিদেশি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই সংকটে যেসব সুপরিচিত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন বাসেম আওয়াদুল্লাহ। তিনি জর্ডানের রয়্যাল কোর্টের সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। সৌদি আরব ও জর্ডান; দুই দেশেরই নাগরিক তিনি। সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ফোরামেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, এই বাসেম আওয়াদুল্লাহকে সঙ্গে না নিয়ে সৌদি প্রতিনিধি দলটি জর্ডান ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছিল না। তবে সৌদি কর্মকর্তারা এই খবরটিকে অসত্য বলে মন্তব্য করেছেন।

বাসেম আয়াদুল্লাহর সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক শক্তির যোগাযোগ রয়েছে। ইসরায়েল ঘেঁষা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক। জেরুজালেমের আশেপাশে ইহুদিবাদীদের জন্য ফিলিস্তিনি ভূমি কিনে নেওয়ার পেছনেও তার ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

বিবিসির সাংবাদিক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, সৌদি আরব ও জর্ডানের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে বড় ধরনের পার্থক্য থাকলেও অনেক বিষয়ে তাদের মিল রয়েছে। এই দুই দেশের মধ্যে কয়েক শতাব্দী ধরে চলছে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক। যৌথ মরু সীমান্তের ব্যাপারে রয়েছে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে যোগাযোগ।

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার-এর ভাষায়, ‘আমি যখন দক্ষিণাঞ্চলীয় জর্ডানে বনি হুয়াইতাত গোত্রের বেদুইনদের সঙ্গে বাস করেছি, আমি দেখেছি যে তারা প্রায়শই সৌদি আরবের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে আবার জর্ডানে ফিরে এসেছে। তাদের ভেড়া, ছাগল ও উট চারণ করার সময় তারা বিভিন্ন পণ্য ও খবর বিনিময় করতো।’

এক দশক আগে আরব দেশগুলোতে যে গণআন্দোলন তৈরি হয়েছিল, যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত, সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত এই দুই দেশের শাসকরা তখন একে অপরের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন।

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, জর্ডানের ক্ষমতাধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র সৌদি আরব বা ইসরায়েল, এ রকম একটি ছোট ও তুলনামূলক দরিদ্র দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করবে; এর পেছনে যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

তিনি লিখেছেন, প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন এবং বর্তমানে তার ছেলে বাদশাহ আব্দুল্লাহর শাসনামলে জর্ডানের হাশেমাইট রাজপরিবার মধ্যপ্রাচ্যের বহু রাজনৈতিক ঝড় সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে জর্ডানের ভূমিকা

ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তির প্রচণ্ড সমালোচনা হয়েছিল জর্ডানে। তবে এর ফলে কিছুটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা তৈরি হয়।

দেশটিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খুব বেশি নেই। এছাড়াও ইরাক ও সিরিয়া থেকে যাওয়া বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পর্যটন শিল্পও আপাতত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের দুর্বল অর্থনীতির ওপর। সরকারের নানা অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভও বেড়েছে। তবে সবকিছুর পরও ওই অঞ্চলের সরকারগুলো বেশ ভাল করেই জানে যে, জর্ডানে রাজতন্ত্রের পতন ঘটলে তার বিপজ্জনক প্রভাব পড়বে আশেপাশের দেশগুলোতেও। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলো খুব দ্রুতই বাদশাহ আব্দুল্লাহর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। প্রিন্স হামজা

কে এই প্রিন্স হামজা?

প্রিন্স হামজা হচ্ছেন প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন ও তার প্রিয় স্ত্রী রানি নূরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ব্রিটেনের হ্যারো স্কুল ও স্যান্ডহার্স্টের মিলিটারি একাডেমির গ্রাজুয়েট এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেছেন জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীতে।

তিনি বাদশাহ হুসেইনের প্রিয় পুত্র ছিলেন এবং ১৯৯৯ সালে তাকেই জর্ডানের যুবরাজ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাদশাহ হুসেইনের মৃত্যুর পর তাকে উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, তার বয়স অনেক কম এবং তিনি অনভিজ্ঞ। ফলে তার পরিবর্তে তার সৎ ভাই আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রিন্স হামজার যুবরাজ খেতাব বাতিল করেন। রানি নূরের জন্য এটি ছিল একটি বড় আঘাত। কারণ তিনি আশা করেছিলেন যে, তার ছেলেই একদিন রাজা হবে। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী