X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুঘল বিজয়ের স্মারক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৪ এপ্রিল ২০২১, ১০:০০আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১০:০০

বিশ্বে গর্ব করার মতো বাংলাদেশের আছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ স্থাপত্যকলা। শিল্পের এই মাধ্যমে কোনও অংশে কম ছিল না এ অঞ্চল। বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত ভ্রমণচারী ও মননশীল মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ।

দক্ষিণমুখী সড়কটা হঠাৎ দুভাগ হয়ে চলে গেছে দুদিকে। দুটি পথ পরম মমতায় আগলে রেখেছে একটি ছোট্ট পাহাড়। ওই পাহাড়ের গায়েই মসজিদ। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ নামেই চেনে পুরো দেশ। সাড়ে তিন শ বছরের পুরনো মসজিদটি যেন ধর্ম আর ইতিহাসের সম্মিলিত পাঠ।

চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক মসজিদটি মুঘল রীতি অনুযায়ী তৈরি। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের ওপর এর অবস্থান। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট আর প্রস্থ প্রায় ২২ ফুট। প্রতিটি দেয়াল প্রায় আড়াই গজ পুরু।

পশ্চিমের দেয়াল পোড়ামাটির তৈরি। বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের। মধ্যভাগে একটি বড় এবং দুটি ছোট গম্বুজ দ্বারা ছাদ আবৃত। ১৬৬৬ সালে নির্মিত এর চারটি অষ্টভূজাকৃতির বুরুজগুলোর মধ্যে পেছন দিকের দুটি এখনও আছে।

সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের ওপর এর অবস্থান পূর্বে তিনটি, উত্তর এবং দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মিহরাব থাকলেও এখন মাঝের সবচেয়ে বড়টাই ব্যবহার হচ্ছে।

মূল ইমারতের প্রবেশপথে কালো পাথরে খোদাই করা সাদা অক্ষরের লেখা ফারসি লিপিতে চোখ আটকে যাবে যে কারও। ওই লেখার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়-‘হে জ্ঞানী, তুমি জগৎবাসীকে বলে দাও, আজ এ দুনিয়ায় দ্বিতীয় কাবা প্রতিষ্ঠিত হলো।’

প্রতি বছরের রমজান মাসজুড়ে শিলালিপির এই ভাষা যেন প্রতিধ্বনিত হয় মসজিদের কোনায় কোনায়। তখন প্রতিদিন মসজিদে দেখা মেলে হাজারো ধনী-গরিবের একসঙ্গে ইফতার করার অনবদ্য দৃশ্য।

মসজিদের ইতিহাসের সন্ধানে উইকিপিডিয়ায় ঢুঁ মেরে জানা গেল, চট্টগ্রামের চাটগছার আন্দরকিল্লার সঙ্গে মুঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনি সম্পর্কিত। এই কেল্লায় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। ১৬৬৬ সালের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁর ছেলে উমেদ খাঁ এই আন্দরকিল্লার অন্দরে বা ভেতরে প্রবেশ করলে এর নাম হয়ে যায় ‘আন্দরকিল্লা’। চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ সালে এখানে নির্মাণ করেন ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ।’

মসজিদটির নকশার সঙ্গে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের অনেক মিল। দিল্লি জামে মসজিদের আদলে বড় বড় পাথর ব্যবহার করে নির্মিত বলে এই মসজিদকে পাথরের মসজিদ, জামে সঙিন মসজিদও বলা হয়।

মসজিদটির নকশার সঙ্গে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের অনেক মিল বুজুর্গ উমেদ খাঁন কর্তৃক মসজিদটি নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রামের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে এটি। মসজিদের ইমাম-খতিব নিযুক্ত হন পবিত্র মদিনা শরিফের আওলাদে রাসুল (সা.) গণ। ফলে অল্পদিনের মধ্যেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তবে মুঘল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের সময়ে (১৭১৯-১৭৪৮ খ্রি.) চট্টগ্রামের নবাব এয়াসিন খান আন্দরকিল্লা মসজিদের অদূরে রহমতগঞ্জে কদম মোবারক নামে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ওটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি সম্পত্তিও দান করেন।

এ ছাড়া ওই মসজিদের পাশের একটি কক্ষে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর কদম মোবারকের ছাপ সম্বলিত একটি পাথর সৌদি আরব থেকে সংগ্রহ করে স্থাপন করেন। ফলে মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয়।

একসময় মুসুল্লিরা এয়াসিন খানের মসজিদের দিকে আকৃষ্ট হতে থাকলে বুজুর্গ উমেদ খাঁনের মসজিদটি ক্রমে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। এ অবস্থায় ১৭৬১ সালে নবাব মীর কাসিম বর্ধমান মেদিনীপুর জেলাসহ চট্টগ্রামের কর্তৃত্ব ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দেন। ইংরেজরা চট্টগ্রামের কর্তৃত্ব গ্রহণ করার পর আন্দরকিল্লা মসজিদটিকে অস্ত্রাগারে পরিণত করে। ১৮৮৫ সালে হামিদুল্লাহ খাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদটি মুসলমানদের ব্যবহারের জন্য আবারও খুলে দেওয়া হয়।

১৯২০ সালে প্রকাশিত চৌধুরী পূর্ণচন্দ্র দেববর্মনের লেখা চট্টগ্রামের ইতিহাস বইটিতে বলা হয়েছে, হামিদুল্লাহ খাঁ ছিলেন চট্টগ্রামের একজন বড় জমিদার। ১৮৪২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন চট্টগ্রাম শাসন করছিল, তখন তিনি এ অঞ্চলের ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন।

এখন এই মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করেন। শুক্রবার জুমায় তা ছাড়িয়ে যায় পাঁচ হাজার।

 

 

 
 
/এফএ/
সম্পর্কিত
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
আগুনে বিলীন ২৫০ মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর পাঠকেন্দ্র
সর্বশেষ খবর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক