X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ

তিন গম্বুজের সূচনা হয়েছিল যে মসজিদ থেকে

ইমরোজ খোন্দকার বাপ্পি, পাবনা
১৩ মে ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ১৩ মে ২০২১, ০৯:০০

বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ। এ নিয়েই বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক আয়োজন ‘বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মসজিদ’। আজ থাকছে পাবনার বিখ্যাত চাটমোহর শাহী মসজিদ।

প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন ৪৪০ বছরের ঐতিহ্য চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’। পাবনা জেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে চাটমোহর উপজেলা। আর উপজেলা পরিষদ থেকে ২০০ গজ দূরেই তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক চাটমোহর শাহী মসজিদ। বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন।

মসজিদের শিলালিপিতে এর নির্মাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে লেখা আছে। শিলাফলকের ফার্সি লিপি থেকে জানা যায়, বিশাল এই মসজিদ সুলতান সৈয়দ বংশীয় প্রধান সৈয়দ আবুল ফতে মুহাম্মদ মাসুম খাঁনের সময় নির্মিত।

কাকশাল গোত্রের সন্তান খান মুহাম্মদ তকি খান ৯৮৯ হিজরি তথা ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শিলালিপি অনুযায়ী অনুমাণ করা হয় মাসুম খাঁন নিজেকে সুলতান ঘোষণা করার কিছুকালের জন্য পাবনায় স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং চাটমোহরে রাজধানী স্থাপন করেন।

শাহী মসজিদের দেয়ালে থাকা প্রাচীন ভাস্কর্যগুলো মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। এ ছাড়া ক্ষুদ্রাকৃতির যে শিলালিপি মসজিদের সামনের ইঁদারার ভেতরের দেয়ালে স্থাপন করা ছিল, তা এখন মসজিদের প্রধান প্রবেশ খিলানে রাখা রয়েছে।

মসজিদে খোদাই করা শিলালিপি মূল শিলালিপিটি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বগুড়ার খেরুয়া মসজিদের সঙ্গে সাদৃশপূর্ণ ছোট ছোট পাতলা জাফরি ইটের সমন্বয়ে নির্মিত চাটমোহর শাহী মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট, প্রস্থ সাড়ে ২২ ফুট ও উচ্চতা ৪৫ ফুট। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন।

স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এক সময় চাটমোহর ছিল পাবনার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। মোঘল ও পাঠানদের অবাধ বিচরণ ছিল এখানে। তখনই তকি খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে অনেক বইয়ের পাতায় এটাকে মাসুম কাবলির মসজিদ বলেও উল্লেখ করা হয়।

মসজিদটি যে জাফরি ইটে বানানো তা এখনকার ইটের মতো নয়। এগুলো খানিকটা চিকন হতো। আর ওই ইট দেখেই বোঝা যায় মসজিদটি কোন আমলের।

মসজিদের ভেতর দুটো কাতার দাঁড়াতে পারে। ভেতরে কালিমা তাইয়েবা লিখিত একটি কালো পাথর রয়েছে। বর্তমানে মসজিদটি একটি সংরক্ষিত ইমারত।

একসময় মসজিদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ৮০’র দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির সংস্কার করে। সংস্কারের কয়েকবছর পর মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও ছাদ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পরে অধিদফতরের অধীনে মসজিদটি আবার সংস্কার করে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মসজিদটিতে তিনটি প্রবেশপথ। তিনটি দরজার মধ্যে প্রধান প্রবেশপথে উঁচু দরজার ওপরে কালো পাথরের মাঝে খোদাই করা কালেমা শাহাদাৎ লেখা রয়েছে। মূল প্রবেশপথ ছাড়া বাকি দুটি একই ধরনের।

তিন গম্বুজের সূচনা হয়েছিল যে মসজিদ থেকে প্রবেশপথের সঙ্গে মিল রেখে পশ্চিম দেয়ালে বানানো হয়েছে তিনটি মিহরাব। সুলতানি রীতিতে মসজিদটির কার্নিশ সামান্য বাঁকানো। খিলানগুলোতে এখনও গোলাপ নকশার চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি খিলান পথেরই দু’পাশে রয়েছে দুটি করে আয়তাকার খোপ নকশা। নকশাগুলো এখন ফাঁকা। তবে ধারণা করা আগে এখানে অলঙ্করণ ছিল।

দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ছাঁচে ঢালা নকশার একটি সারি রয়েছে। যে কারণে মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখতে দ্বিতল বলে মনে হয়। মিহরাবগুলো আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। শুরুতে এগুলোতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ ছিল। যার কিছু চিহ্ন এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। গোলাপ নকশা, পুষ্পলতা এবং জ্যামিতিক নকশার মতো নানা মোটিফ এখানে ব্যবহৃত হয়েছিল।

তিন গম্বুজের সূচনা হয়েছিল যে মসজিদ থেকে চাটমোহর শাহী মসজিদের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সাইট পরিচালক শাহজাহান আলী জানান, পাবনার এ মসজিদ এবং বগুড়ার শেরপুরের খেরুয়া মসজিদ- দুটিই ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এবং হুবহু একই পরিকল্পনায় বানানো। বাংলায় বিদ্যমান মোঘল ইমারতের মধ্যে এ দুটি অতিপ্রাচীন নিদর্শন। মুঘল আমলে হলেও এগুলোতে এ অঞ্চলের প্রচলিত সুলতানি স্থাপত্য রীতির প্রভাব রয়েছে। বাঁকানো কার্নিশ, দ্বিকেন্দ্রিক সুঁচালো খিলান, অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব, গম্বুজ, গম্বুজ নির্মাণে বাংলা পেন্ডেনটিভের (লম্বমান অংশ) ব্যবহার- সবই সুলতানি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য।

তিন গম্বুজের সূচনা হয়েছিল যে মসজিদ থেকে তিনি বলেন, বাংলায় তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ পরিকল্পনার সূচনা হয়েছিল এখানেই। পরে তা সম্প্রসারিত ও পরিবর্তিত হয়ে দীর্ঘদিন এ অঞ্চলের স্থাপত্যকলায় প্রভাব বিস্তার করেছিল।

তিনি আরও জানান, সুলতানি-মোঘল আমলের শাহী মসজিদ দেখতে সারাবছর বহু মানুষ আসেন পাবনার চাটমোহরে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরাও আসেন এর কারুকাজ দেখতে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয় এই মসজিদে। এ ছাড়া মসজিদের বাইরে দুটি ঈদের নামাজের জামাতও হয়। এই মসজিদে একজন ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন রয়েছেন। তিন গম্বুজের সূচনা হয়েছিল যে মসজিদ থেকে

 
/এফএ/
সম্পর্কিত
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
আগুনে বিলীন ২৫০ মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর পাঠকেন্দ্র
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!