X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
ডেল্টা প্ল্যান-২১০০

বাস্তবায়ন না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতি

শফিকুল ইসলাম
১৮ মে ২০২১, ২২:০২আপডেট : ১৮ মে ২০২১, ২২:০৯

সরকারের এক শ’ বছরের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তাবিয়ত না হলে দেশের সামষ্টিক এবং খাতভিত্তিক অর্থনীতি যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সহনীয় অবস্থায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভৌত সম্পদ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রতিবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে।

এ ছাড়াও বাড়বে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের চরম পর্যায়ে এ সকল ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যয় সমানুপাতিক হারে বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশন ডেল্টা প্ল্যানে বলা হয়েছে, শতবর্ষী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পানি, পরিবেশ, ভূমি, কৃষি (বন, প্রাণিসম্পদ, এবং মৎস্য) ইত্যাদি খাতের কৌশল প্রণয়ন এবং যথাযথ বিনিয়োগ, নতুন নীতিমালা প্রণয়ন, ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রয়োজন হবে।

পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে প্রতিবছর মোট দেশজ আয়ের প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। এখন এ ব্যয় জিডিপির শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।

বর্তমান বিনিয়োগ এবং বিদ্যমান দেশজ আয় ব্যবহার করে পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য প্রাক ব্যায়ের মাত্রা ২০১৬ অর্থবছরের ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ ২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।

বাস্তবায়ন না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতি

বিনিয়োগ অগ্রাধিকার

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর ধারণা অনুযায়ী মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থায়ন বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় বেসরকারি খাত থেকে এবং ২ শতাংশ সরকারি খাত থেকে নির্বাহ করতে হবে। সরকারি খাত থেকে পাওয়া ২ শতাংশ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করার পর অবশিষ্ট দেড় শতাংশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এ বিনিয়োগ পরিকল্পনার আওতায় ব্যয় করা হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে রক্ষাণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খাত বেশ অবহেলিত এবং এ ব্যয়ের প্রকৃত পরিমাণও মোট দেশজ আয়ের দশমিক ১ শতাংশের বেশি নয়। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না করা হলে পানিসম্পদ খাতে বিদ্যমান অবকাঠামোর স্থায়িত্বের দ্রুত অবনতি ঘটবে এবং পরে এ সকল অবকাঠামো আরও বেশি ব্যয়ে পুনর্নিমাণ করতে হবে বলে মনে করে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ডেল্টা প্ল্যানে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে বড় প্রকল্প প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন সীমিত হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রকল্প গ্রহণে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। কারণ, ব-দ্বীপ পরিকল্পনার প্রকল্পগুলো শুধু ভৌত বিনিয়োগ নয়, বরং অধিকতর গবেষণা, জ্ঞান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা উত্তরণেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর বেশিরভাগ সরকারি অর্থায়ন বন্যা থেকে রক্ষা, নদী ভাঙন, নিয়ন্ত্রণ, নদীশাসন, এবং নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন হবে। এগুলো এখন বাংলাদেশের অগ্রাধিকার পাওয়া বিনিয়োগ খাত। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ মোট ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বিনিয়োগের প্রায় ৩৫ শতাংশ।

এগুলো অত্যন্ত পুঁজিঘন বিনিয়োগ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। যা শতবর্ষী পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা ও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্বলিত প্রধান নগরগুলোতে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদি খাতে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বিনিয়োগ থেকে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে।

অধিকন্ত, ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০৩০ সাল নাগাদ ডেল্টা প্ল্যানের মোট বিনিয়োগের প্রায় ২০ শতাংশ প্রয়োজন হবে।

বাস্তবায়ন না হলে ক্ষতির মুখে পড়বে সামষ্টিক অর্থনীতি

বিনিয়োগ পরিকল্পনা

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ব-দ্বীপ বিনিয়োগ পরিকল্পনায় যাচাই-বাছাই শেষে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প ৬৫টি এবং ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প।

এ সকল প্রকল্পে মোট মূলধন বিনিয়োগ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পরবর্তী ৮ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে শুরু করা যেতে পারে। যদিও বিনিয়োগের পরিমাণ ও কর্মসূচির প্রকৃতি অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন পরবর্তী কয়েক দশকেও সম্প্রসারিত হবে।

উন্নয়ন অভিযোজি ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা (এডাপটিভ ডেলটা ম্যানেজমেন্ট- এডিএম) নীতি অবলম্বনে সমন্বিত ও ব্যাপক পরামর্শের ভিত্তিতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণে বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় ব-দ্বীপ বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) কর্তৃক পানিসম্পদ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা থেকে অগ্রাধিকার পাওয়া মোট ১৩৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর জন্য প্রাক্কলিত মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫৩ বিলিয়ন টাকা।

প্রাপ্ত প্রকল্প প্রস্তাবগুলো অভিযোজি ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণে যাচাই শেষে শ্রেণিভুক্ত করে ৮০টি প্রকল্প বিনিয়োগ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প অভিযোজি ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা এবং তা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর এক বা একাধিক অভিষ্ট অর্জনে সহায়ক কিনা তার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী ও ডেলটা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ডেলটা প্লানের প্রথম ধাপে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগ প্রস্তাবও রয়েছে। এসব বিনিয়োগ কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। তবে বাস্তবায়নটা চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই সরকার কাজ করছে।

উল্লেখ্য, ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেলটা প্ল্যান তথা ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পনি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বন্য নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন। এরইমধ্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ‘ডেলটা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’। ২০২০ সালের ১ জুলাই ১২ সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডেলটা গভর্ণ্যান্স কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

ডেলটা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, পানি সম্পদমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্যকে এই কাউন্সিলের সদস্য সচিব করা হয়েছে।

/ইউআই/এফএ/
সম্পর্কিত
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ডেল্টা প্ল্যান-২১০০‘কৌশলগুলোর বাস্তবায়ন কঠিন হবে না’
ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে অর্থের যোগান নিশ্চিত নয়
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন