X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সীমান্তবর্তী হওয়ায় খুলনা ঝুঁকিপূর্ণ

খুলনা প্রতিনিধি   
৩০ মে ২০২১, ০৯:০১আপডেট : ৩১ মে ২০২১, ০৪:৫৫

দেশব্যাপী করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও খুলনা জেলাসহ বিভাগে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে ও ভারতে করোনা প্রকোপ থাকায় এ বিভাগকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সার্বিকভাবে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে খুলনা অন্যান্য বিভাগ থেকে ভালো অবস্থানে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। কিন্তু ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের দাবি ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এখনও মাস্ক ব্যবহার সুনিশ্চিত করা যায়নি।    

খুলনার ব্যবসায়ী আজমল উল্লাহ বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে কেনাকাটা নিয়মিত থাকতো। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে চাপ পড়তো না। বন্ধ রাখার পর হঠাৎ খুলে দেওয়ায় চাপ বেড়ে যায়। যা করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’ 

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, ‘সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় ভয়ারিয়েন্ট নিয়ে লোকজনের খুলনায় আসা, প্রতিরোধে দায়িত্বশীল বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকা এবং অসচেতনতার কারণে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বাজার, দোকানপাট সব কিছু খুলে দিয়ে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক তালিকা করে একদিন এক এক ওয়ার্ড বা এলাকার লোকজনকে বের হতে না দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা কিন্তু ঘরে আটকে নেই। তাহলে এভাবে কী লাভ হচ্ছে। করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলো সমন্বিত হওয়া দরকার।’ 

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ড. রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘খুলনা বিভাগ রাজশাহী বিভাগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। শুধু ভারতের করোনা প্রকোপের কারণে সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি জেলা থাকায় খুলনাকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। বাস্তবে খুলনা বিভাগে করোনা পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে আছে।’

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘এপ্রিল মাসে খুলনা জেলায় গড়ে ২৩ শতাংশ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। কিন্তু মে মাসে এখনও করোনা পজিটিভ ২০ শতাংশ পার হয়নি। এ হিসাবে খুলনা জেলায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। মাঝে মাঝে পজিটিভ শনাক্তের হার সামান্য বেড়ে যায়। সেটা অসচেতনতার কারণে হয়। এখনও বাজার, দোকান, সড়কে মাস্ক ছাড়া লোকজনকে ঘুরতে দেখা যায়। আমরা এ বিষয়ে কঠোর হচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘খুলনায় স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে চমৎকার সমম্বয়ে রয়েছে। ফলে খুলনায় এখনও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’  

খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে আরও ১০৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা জানান।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন খুলনার দুই জন, সাতক্ষীরার একজন, চুয়াডাঙ্গার একজন এবং মেহেরপুরের একজন।

খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে ২৯ মে সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৫৩ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩৩ জনে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১ হাজার ২০৩ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা য়ায়, বিভাগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১১৮ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯ হজার ১০৫ জন। এছাড়া বাগেরহাটে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫১৩ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪০৬ জন। সাতক্ষীরায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৫৩৫ জন এবং মারা গেছেন ৪৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৩‌১৫ জন। যশোরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৩০ জন, মারা গেছেন ৭৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩৭৮ জন। নড়াইলে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৮৬৮ জন, মারা গেছেন ২৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হজার ৮১৫ জন। মাগুরায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২৫৩ জন, মারা গেছেন ২৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১৮৯ জন। ঝিনাইদহে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৯৮ জন, মারা গেছেন ৫৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হজার ৭২৬ জন। কুষ্টিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯০০ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১১০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২৩৫ জন। চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৯৫৬ জন, মারা গেছেন ৬০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮১১ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে সর্বনিম্নে রয়েছে মেহেরপুর। এখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮৬ জন। মারা গেছেন ২২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮৩৫ জন।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনায় করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯১ জন। যার মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় দুই জন করোনা রোগী মৃত্যুবরণ করেন।

/আইএ/এমকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে’
‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে’
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
মধুমতি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দুদকের
মধুমতি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দুদকের
আইসিটি খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
আইসিটি খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ