খুলনার করোনা ইউনিটের কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। এখানে অবহেলার কারণে চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। মাস্ক ছাড়াই বাইরের লোকজন যত্রতত্র প্রবেশ করছে। করোনা ইউনিটের ভর্তি থাকা রোগী নিজেই ওষুধ আনতে বাইরের ফার্মেসিতে যাচ্ছেন। যত্রতত্র সাধারণ মানুষ ডুকছে এবং বের হচ্ছে। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার। নেই শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের থার্মোমিটার। নিরাপত্তা কর্মীদের নজরদারিও নেই।
অপরদিকে করোনা ইউনিটে রোগী এলে তাদের বহন করা এবং চিকিৎসা নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। শনিবার একজন সুচিকিৎসা না পেয়ে এবং অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন আব্দুস সামাদ হাওলাদার (৯০) নামে এক রোগী। তিনি সাবেক ফরেস্ট কর্মকর্তা। স্বজনদের কান্নাকাটি এবং আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট এলাকায়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও করোনা ইউনিটে এ রোগীকে আনার পর দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন আব্দুস সামাদ হাওলাদারের ছেলে রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে বাবার পাতলা পায়খানা ও জ্বর। শনিবার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ কারণে প্রথমে খুলনা খালিশপুর ক্লিনিকে নিই। সেখান থেকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে জ্বর এবং পাতলা পায়খানার কথা শুনে কোনও ডাক্তার এবং নার্স বাবার কাছে আসেননি। বাবাকে বাইরে রেখে জরুরি বিভাগে গিয়ে ভর্তির এক ঘণ্টা পর করোনা ইউনিটে নিয়ে যাই। সেখানেও ইউনিটের সামনেও প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এর পর বাবার অবস্থার অবনতি হলে কান্নাকাটি শুরু করি। তখন সংবাদকর্মীদের দেখে আয়ারা ট্রলি নিয়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে বাবার অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং ভেতরে ঢোকানোর কিছুক্ষণ পরই বাবাকে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন।’
আব্দুস সামাদের স্ত্রী বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর জন্য ডাক্তাররাই দায়ী। যদি একটু অক্সিজেন দেওয়া হতো, তাহলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করতো না।’
আব্দুস সামাদকে বহনকারী অটোচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘খালিশপুর থেকে রোগীকে এনে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থান করেও কোনও ধরনের সহযোগিতার মনোভাব দেখিনি। ডাক্তারদের অবহেলার কারণে তিনি মারা যান।’
করোনা ইউনিটেড রোগী নিয়ে আসা মুন্না বলেন, ‘করোনা ইউনিটের অবস্থা খুবই নাজুক। যত্রতত্র মানুষ বের হচ্ছে এবং ঢুকছে। স্বাস্থ্য বিধির কোনও তোয়াক্কা নেই।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘স্ত্রী করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে ভর্তি আছে। দুঃখের বিষয় আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। কিন্তু যত্রতত্র মানুষ ভেতরে যাতায়াত করছে। করোনা ইউনিটের ভর্তি রোগীরা বাইরে ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনে আনছে। কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের সামনেই এ ঘটনা ঘটছে।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাষ রঞ্জন হালদার বলেন, ‘করোনা ইউনিটে দর্শনার্থীদের কার্ড রয়েছে। কার্ড ছাড়া আমরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। এখানে কর্মরত ডাক্তার, নিরাপত্তাকর্মীরা রয়েছেন। ডাক্তাররা সর্বক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছেন।’ তবে মৃত্যুবরণকারী আব্দুস সামাদ হাওলাদারের বিষয়টি শুনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।