X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

‘বস’ রাফি ও ‘ম্যাডাম’ সাহিদার ভয়ংকর চক্র

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ জুন ২০২১, ১৯:৫৭আপডেট : ০১ জুন ২০২১, ২০:২৫

ভারতে এক বাংলাদেশি তরুণীর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরাও সবাই বাংলাদেশি। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোমবার (৩১ মে) রাত থেকে চলা অভিযানে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতরা হলো, চক্রের মূল হোতা আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি ও তার অন্যতম নারী সহযোগী সাহিদা বেগম, ইসমাইল সরদার, আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ। তারা চার জন মিলে গড়ে তুলেছে ভয়ংকর এক পাচার চক্র। এই চক্রটি ভারতে নারী পাচার করে তাদের যৌন ব্যবসায় বাধ্য করতো।

মঙ্গলবার (১ জুন) বিকালে কাওরানবাজার মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বেশ কয়েকটি ধাপে নারী পাচারের কাজ করতো চক্রটি। ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উভয় পথেই সীমান্ত অতিক্রম করানো হতো। তারা কয়েকটি ধাপে পাচার করতো। প্রথমত, ভিকটিমদের তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তবর্তী জেলা, যেমন- যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ নিয়ে আসতো। এরপর ভিকটিমকে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন সেফ হাউজে নিয়ে রাখা হতো। সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করানো হতো। পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্টরা তাদের সীমান্ত নিকটবর্তী সেফ হাউজে রাখতো। সুবিধাজনক সময়ে কলকাতার সেফ হাউজে প্রেরণ করা হতো। কলকাতা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বেঙ্গালুরু পাঠানো হতো তাদের। বেঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর গ্রেফতারকৃত বস রাফি তাদের বিভিন্ন সেফ হাউজে রাখতো। এরপর ব্ল্যাকমেইল ও মাদকাসক্তে অভ্যস্ত ও অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। সেফ হাউজগুলো থেকে তাদের ১০/১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন খদ্দেরের কাছে পাঠানো হতো। এক্ষেত্রে পরিবহন ও খদ্দেরের নির্ধারিত স্থানে অবস্থানের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হতো।

‘বস’ রাফি ও ‘ম্যাডাম’ সাহিদার ভয়ংকর চক্র

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত রাফি একসময় এ ধরনের পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ছিল। রাফি তামিল ভাষা রপ্ত করেছিল। ফলে এ ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা ব্যাপক ভূমিকা রাখে। একপর্যায়ে সে লিডার হয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্ট তাকে খদ্দেরপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা কমিশন দিতো।

কে এই বস রাফি

বস রাফির শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ৮ বছর আগে থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তার যাতায়াত শুরু হয়। সে সেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভার, রিসোর্ট কর্মচারী হিসেবে ও কাপড়ের ব্যবসা করতো। ৫ বছর ধরে সে নারী পাচারে জড়িত। দুই বছর আগে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে তার পরিচয়। টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণীকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে বস রাফি। টিকটক হৃদয় ছাড়াও তার অন্যান্য এজেন্ট রয়েছে।

সম্প্রতি ভারতে এক তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই তরুণীকে ভারতে পাচার করে টিকটক হৃদয়। বস রাফি তাকে গত বছরের অক্টোবরে বেঙ্গালুরে নিয়ে সবুজের বাড়ির সেফ হাউজে রাখে। সেখানেই ভিডিওটি ধারণ করা হয় বলে জানা যায়। বেঙ্গালুরে বস রাফির বেশ কয়েকটি সেফ হাউজ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তার সেফ হাউজ রয়েছে। এরমধ্যে ম্যাডাম সাহিদার সেফ হাউজ অন্যতম।

‘বস’ রাফি ও ‘ম্যাডাম’ সাহিদার ভয়ংকর চক্র

যেভাব বস’ রাফির সঙ্গে কাজ করতো ম্যাডাম’ সাহিদা

বস রাফির অন্যতম নারী সহযোগী ম্যাডাম সাহিদা। তার তিনবার বিয়ে হয়েছিল।  সে এবং তার দুই মেয়ে সোনিয়া ও তানিয়া বর্ণিত পাচার চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়ভাবে জড়িত। সোনিয়া ও তানিয়া বর্তমানে বেঙ্গালুরে অবস্থান করছে বলে গ্রেফতারকৃত সাহিদা জানায়। ভাইরালকৃত ভিডিওতে তানিয়াকে সহযোগী হিসেবে দেখা গিয়েছে। সাহিদা বাংলাদেশ এলাকায় একটি সেফ হাউজ পরিচালনা করছে। সে এই ব্যবসায় ১০ বছর ধরে জড়িত। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ইসমাইল ও আব্দুর রহমান শেখ  বস রাফির বিশেষ সহযোগী হিসেবে পাচার তদারকি করে থাকে। তারাও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশ রিফাজুল ইসলাম বাবু ওরফে টিকটক বাবু ওরফে হৃদয় বাবু, সাগর, মোহাম্মদ বাবা শেখ ও দুই নারীসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ২৭ মে রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় টিকটিক বাবুসহ অজ্ঞাত আরও ৪ জনকে আসামি করা হয়। উক্ত ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব উক্ত ঘটনা ছায়াতদন্ত শুরু এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

/আরটি/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তরুণ সমাজকে অবশ্যই মাদকমুক্ত রাখতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তরুণ সমাজকে অবশ্যই মাদকমুক্ত রাখতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিচার বিভাগের সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় অর্থায়নে রাজি ইইউ: আমির খসরু
বিচার বিভাগের সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় অর্থায়নে রাজি ইইউ: আমির খসরু
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে
এনবিআর কর্মকর্তাদের কলমবিরতি অব্যাহত, রাজস্ব ভবনে সেনা-পুলিশ মোতায়েন
এনবিআর কর্মকর্তাদের কলমবিরতি অব্যাহত, রাজস্ব ভবনে সেনা-পুলিশ মোতায়েন
সর্বাধিক পঠিত
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা
নূরুল হুদাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জনের জামিন
নূরুল হুদাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জনের জামিন