X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা

পাবনা প্রতিনিধি
১৬ জুন ২০২১, ২০:১৪আপডেট : ১৬ জুন ২০২১, ২০:২১

পাবনায় গণপূর্ত ভবনে অস্ত্র নিয়ে মহড়ায় নেতৃত্ব দেওয়া হাজী ফারুক হোসেন জোরপূর্বক ঠিকাদারি কাজ নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৩ মে জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার বিষয়ে সমালোচনা শুরু হলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাজী ফারুকের নানা অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এরই মধ্যে ফারুকের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার কথা জানালেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পাবনার সহকারী প্রকৌশলী ও দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেক।

তিনি বলেন, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় একটি রাস্তা নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৩ মে দুপুরে হঠাৎ হাজী ফারুক হোসেন আমার কক্ষে এসে কাজটি তাকে দেওয়ার দাবি করেন। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন, দরপ্রস্তাব ও কাগজপত্র ঠিক থাকলে কাজ পাবেন। যোগ্যতা না থাকলে বাতিল হবে জানালে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে মারতে উদ্যত হন। সহকর্মীরা তাকে নিবৃত্ত করলেও আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন ফারুক।

এ বিষয়ে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে বিষয়টি জানিয়েছি। আমি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রভাবশালী দুজন জনপ্রতিনিধি বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ নিয়ে আমাদের অফিসে আসেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করে নেন।

আব্দুল খালেক বলেন, আমি নিয়মনীতির বাইরে কোনও কাজ করি না। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেব সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে চাই। এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোটেও প্রত্যাশা করি না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। সব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সাক্ষাতে বিস্তারিত জানাবো। সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকা জনপ্রতিনিধিদের নাম জানতে চাইলে বলতে রাজি হননি নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান।

স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ ও অনিয়ম, নিম্নমানের কাজ করে বিধিবহির্ভূতভাবে বিল আদায় করতে সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ এটিই প্রথম নয়। এর আগেও কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেছেন হাজী ফারুক। তার দাপটে সরকারি সব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ ঠিকাদাররা আতঙ্কিত। মান সম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া তো দূরের কথা, তার বিরুদ্ধে মুখ খোলারই সাহস করেন না কেউ।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর হাজী ফারুক জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে ঢুকে সুপারিনটেনডেন্ট মুশফিকুর রহমানকে লাঞ্ছিত করলে জীবনের নিরপত্তা চেয়ে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, জেলা ফিনান্স ও অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে সব সরকারি কর্মকর্তার বেতন ও উন্নয়নকাজের বিলের অর্থ দেওয়া হয়। নাইস কন্ট্রাসটাকশনের মালিক ফারুক হোসেন তার ঠিকাদারি কাজের জামানাতের পাঁচটি চালান হারিয়ে পরে ডুপ্লিকেট চালান তৈরি করে বিল দাখিল করেন। বিষয়টি আইন সম্মত না হওয়ায় হারিয়ে যাওয়া জামানাতের চালানের অনুকূলে থানায় সাধারণ ডায়েরিসহ বিল দাখিলের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দিন বিকালে ম্যানেজার আসাদকে সঙ্গে নিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হন ফারুক। এ সময় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে এসে তাকে থামাতে গেলে আমাকে হত্যার হুমকি দেন।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নাইস কনস্ট্রাকশনের মালিক ফারুক হোসেন একসময় ঠিকাদারের সাইট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি বিদেশে চলে যান। ২০০৮ সালে ফেরেন। এরপর পাউবো, এলজিইডিসহ বিভিন্ন দফতরের দরপত্র ছিনতাই, ঠিকাদারদের টেন্ডারে অংশগ্রহণে বাধা ও সিন্ডিকেট করে কাজ ভাগিয়ে নিতে শুরু করেন ফারুক।

স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় একপর্যায়ে টেন্ডার সমঝোতা কমিটির নীতিনির্ধারক হয়ে যান। পরিচিতি পান নিগো ফারুক হিসেবে। ধীরে ধীরে এলজিইডির উন্নয়নকাজে আধিপত্য বিস্তার করে কখনও নিম্নমানের কাজ করে, কখনও কাজ না করে বিল তুলে সম্পদ গড়েন তিনি।

গত বছর ফারুক তার নাইস কনস্ট্রাকশনের অধীনে কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারি মেশিনারিজ, ব্যক্তিগত দুটি পাজেরো গাড়ি, কার ও মোটরসাইকেলসহ প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব) মঞ্জুর কাদেরের বিলাস বহুল বাড়ি কিনে ভাড়া দিয়েছেন।

এ বিষয়ে হাজী ফারুক বলেন, প্রকৌশলী আব্দুল খালেকের সঙ্গে আমার কাজ নিয়ে কোনও ঝামেলা হয়নি। একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমি ক্ষমা চেয়েছি। বিভিন্ন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। কেউ এর আগে অভিযোগও করেনি।

অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়ে হাজী ফারুক বলেন, অবৈধপথে সম্পদশালী হইনি। পৈতৃক সূত্রে কিছু সম্পদ ছিলো। ঠিকাদারি ব্যবসায় ভালো করায় সম্পদ বেড়েছে। এতে দোষের কিছুই নেই।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ