X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত চাপ বেড়েছে: টিআইবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ জুন ২০২১, ২০:৩১আপডেট : ২২ জুন ২০২১, ২০:৩১

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই চাপ মোকাবিলা করেই সৎ সাহস ও নীতি-নৈতিকতা বজায় রেখে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করে সংস্থাটি। ‘করোনাকালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা এবং ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২০’ ঘোষণা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনলাইন প্লাটফর্মে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখন আর  নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন না। কোভিড বিষয়ে চুরি নিয়ে সব সাংবাদিকতা হচ্ছে। কিন্তু কোনও কাঠামোগত বিশ্লেষণ খোঁজা হচ্ছে না। এ সময়ে এসে নতুন পর্যায়ের সাংবাদিকতায় যেতে হবে। শুধু চুরি হওয়ার খবর নয়, কেন চুরি হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে সেটার কারণ খুঁজতে হবে।’

ড. গীতিআরা নাসরিন বলেন, ‘অসুস্থতা, মৃত্যু ও অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি এসময়ে সাংবাদিকদের ওপর চাপ প্রয়োগের ঘটনা বেড়েছে। এখন সাংবাদিক এবং পাঠক-দর্শকরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছেন। দর্শক-পাঠকরা প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করছেন।’

সাংবাদিক জুলফিকার আলী মাণিক বলেন, ‘সাংবাদিকতায় বাইরের চাপ আমাদের নতজানু করে ফেললেও নীতি-নৈতিকতা অনুসরণ করেই সাংবাদিকদের তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করতে হবে। তরুণ সাংবাদিকদেরকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও  সচেতন হতে হবে।’

চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন বলেন, ‘সাংবাদিকতায় সবসময়ই চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাংবাদিক সংগঠনগুলো সাংবাদিকদের জন্য কী করছে? বিভিন্ন বিষয়ে দোষারোপ করে সাংবাদিকতার সংকট দূর করা যাবে না। এ ব্যাপারে অ্যাকাডেমিক আলোচনা প্রয়োজন।’

এমআইডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রতিবেদনে কাঠামোগত দুর্বলতা আছে, সেখানেই প্রশ্ন করা হয়। তাই অনুসন্ধান যদি কাঠামোগতভাবে সঠিক হয়, তাহলে সাংবাদিক ও সম্পাদকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’

একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা প্রধান শাকিল আহমেদ বলেন, ‘মানুষের গল্প তুলে আনতে পারলে সেটাই সংবাদ মাধ্যমকে এগিয়ে নিতে পারে। তবে সাংবাদিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। সাংবাদিকের সুরক্ষা এবং সম্পাদকের এখতিয়ার আইন ও বিধি দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে।’

এশিয়ান টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান মানস ঘোষ বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন মন্দের ভালো। তারপরও আরও অনেক কিছুর দরকার আছে।’

গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন বলেন, ‘আমরা যতই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা কিংবা ঐক্যের কথা বলি, নানা প্রতিবন্ধকতা আমাদের আষ্টেপৃষ্টে আটকে রেখেছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যারা কাজ করি, তাদের সমস্যা আরও প্রকট।’

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘ক্লাব বা ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে আমাদের যেমন রাজপথে থাকা দরকার, তেমনই বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরেও থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন চাপ মাথায় নিয়ে পাঠক-দর্শকের প্রত্যাশা পূরণে যা করা দরকার, তার সবটা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।’

জিআইজিএন এর বাংলা বিভাগের সম্পাদক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতির পরিধি যেমন বৈশ্বিক হয়েছে, সাংবাদিকতার পরিসরও তেমন বৃদ্ধি পাওয়া দরকার।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জই বিদ্যমান। সাংবাদিকতা বা গণমাধ্যমের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা সাংবাদিকতাকে আয়নার সামনে দাঁড় করানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো ‘জিরো সাম গেম’, অর্থাৎ ‘জিততেই হবে বা ক্ষমতায় থাকতেই হবে’! এজন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হবে, তাকে ধরাশায়ী করতে হবে। আর এই কাজটা যখন সাফল্যের সঙ্গে বা তুলনামূলক সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়, তখন বাকি থাকে নাগরিক সমাজের একাংশ এবং গণমাধ্যম। যারা কথা বলে, যারা লেখে, যারা সরকারের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চায়, তারা। সহায়ক ভূমিকা পালনের এই প্রয়াসকে সরকারের একাংশ শত্রু হিসেবে দেখে।’’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে অনেক সাংবাদিক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা করেন বা চলে যান।’

আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স বিভাগের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম।

 

 /জেইউ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
এআই নীতি প্রণয়নে সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
সম্পদের হিসাব জমার বাধ্যবাধকতা বাতিল হলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে: টিআইবি
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ