ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএইচএম আহসান বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের রফতানি ৪ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা মোকাবিলায় রফতানির দক্ষতা বাড়ানো ও বহুমুখীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রবিবার (১১ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রফতানি বহুমুখীকরণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ: প্রেক্ষিত নীতিমালা সংস্কার’ শীর্ষক এক ডায়ালগে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এএইচএম আহসান বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৮.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮১ শতাংশ তবে বিগত বছরে মোট রফতানিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ছিল ৮৪%। এ থেকে বোঝা যায়, তৈরি পোশাক খাতের বাইরের সম্ভাবনাময় খাতসমূহ এগিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে আরও এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করছে।
ডায়ালগে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত পণ্য, তথ্য-প্রযুক্তি ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সেবা, ওষুধ, কৃষি ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রভৃতি পণ্যের বৈদেশিক রফতানিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তবে তা কাজে লাগানোর জন্য সহায়ক নীতিমালা জরুরি। এ ছাড়া স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রাপ্তি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক হ্রাস, নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা নিরসন, কাস্টমস ও টেস্টিং-এ দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস, এপিআই শিল্প পার্কের কাজ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন, বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন, কৃষিকাজে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দরকষাকষিতে দক্ষতা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়াও এলডিসি উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনাময় রফতানিমুখী খাতগুলোকে বন্ডেড ওয়ারহাউস সুবিধা প্রদান, শুল্ক ও আমদানি নীতিমালার সংস্কার, নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বাড়ানো, পাট খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও ভ্যাট প্রত্যাহার, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ডাটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা প্রদান এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উপর জোরারোপ করেন।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি নতুন সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তিনি দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে আরও বেশি হারে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান।
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট প্রভৃতি খাতকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বৃহৎ একটি অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে এবং সেখানে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও তিনি এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেন। তিনি পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে দেশের ইমেজ ও বিনিয়োগ বাড়বে। ইউরোপের বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজারগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সদস্য (কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড-এর অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাইক্রো ফিন্যান্স) ড. মো. খাইরুজ্জামান মজুমদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইকোনোমিক এ্যাফেয়ার্স উইং) আন্দালিব ইলিয়াস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (এক্সপোর্ট-২) মো. আব্দুর রহিম খান, বাংলাদেশ ব্যাংক-এর নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পরিচালক (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইনসেন্টিভ-১) মো. আরিফুল হক এবং সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান অংশগ্রহণ করেন।
