X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মগবাজার বিস্ফোরণ তিতাসের লিকেজ থেকেই: পুলিশ

নুরুজ্জামান লাবু
২২ জুলাই ২০২১, ২১:০০আপডেট : ২২ জুলাই ২০২১, ২১:৫০

রাজধানীর মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তৈরি করা তদন্ত কমিটি তিতাসকে দায়ী করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে ভবনের একটি কক্ষে গ্যাস জমে। সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চরম অবহেলার বিষয়টি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঈদের ছুটির পরই এই প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে জমা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় রাখিনীড় নামের একটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বিস্ফোরক অধিদফতর, তিতাস ও পেট্রোবাংলার পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতর থেকে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান রহমত উল্লাহ চৌধুরী সুমনকে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর ধারা উল্লেখ করে রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা দায়ের করেছে, সেই মামলাটিও তদন্ত করছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মামলার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

তিতাসের ‘দায় এড়ানোর কৌশল’
ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস যে তদন্ত কমিটি করেছিল, অনেকটা তড়িঘড়ি করে সবার আগে সেই কমিটি তিতাসের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনে নিজেদের দায় এড়িয়ে এলপিজি সিলিন্ডারের কারণে শর্মা হাউজের কিচেন থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তারা উল্লেখ করেছে।

তবে তাদের এই প্রতিবেদনকে ‘দায় এড়ানোর কৌশল’ বলছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। পুলিশের কমিটির এক সদস্য বলছেন, এলপিজি সিলিন্ডার থেকে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

পরিত্যক্ত রাইজারই সূত্র
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরাও বলছেন, তারা ঘটনার পরপরই ওই ভবনে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পরিমাপ করেছেন। ভবনের পশ্চিমাংশে যে বেঙ্গল মিটের দোকান ও চিলার রুম ছিল সেদিকটায় মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। যা তিতাসের পাইপ থেকে লিকেজ হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘মূল সড়ক থেকে তিতাসের গ্যাস পাইপ থেকে একটি সংযোগ ছিল ওই ভবনে। কয়েক দিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওটা। কিন্তু সেখানে একটি পরিত্যক্ত গ্যাস রাইজারের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। ওই সংযোগ পাইপ থেকে লিকেজ হয়ে গ্যাস বেঙ্গল মিটের চিলার রুমে গিয়ে জমাটবদ্ধ হয়েছিল।’

‘বেঙ্গল মিটের চিলার রুমের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে কম রাখা হয়। যেখানে তাপমাত্রা কম থাকে সেখানেই মিথেন গ্যাস জমতে থাকে দ্রুত। চিলার রুমের গ্যাস জমাট বেঁধে বাতাসের সংমিশ্রণে এসে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল’—বলছিলেন ওই কর্মকর্তা।

মগবাজারের ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন বেঙ্গল মিটের চিলার রুমে, একজন বেঙ্গলমিটের সামনের শোরুমে, নারী ও শিশুসহ তিন জন শর্মা হাউজে, একজন চিলার রুমের পেছনের গার্ডরুমে এবং বাকিরা ফুটপাতের পথচারী ও সড়কে থাকা যানবাহনের যাত্রী ছিলেন।

কমিটি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মগবাজারের এই বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। ভবনের মালিক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন এ তালিকায়। কমিটিতে বিস্ফোরক অধিদফতরেরও একজন প্রতিনিধি রয়েছেন।

কমিটির সদস্যরা বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বেঙ্গল মিটের চিলার রুমকেই চিহ্নিত করে বলছেন, বিস্ফোরণের আগে চিলার রুমের চারপাশের অবকাঠামোর বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে বিস্ফোরণের পর এর মাত্রা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বেঙ্গল মিটের পশ্চিম দিকের জেনারেটর রুমের নিচ দিয়ে সড়কের মূল গ্যাস লাইন থেকে কোনাকুনি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রধান ফটকের কাছে গ্যাসলাইনের একটি পরিত্যক্ত রাইজার ছিল। মূলত এই রাইজার থেকেই লিকেজ হয়েছিল। এখানেই মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা।

আলোচিত এই বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল তারা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে জমাটবদ্ধ গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে এবং বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থল বেঙ্গল মিটের চিলার রুম বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে সরাসরি তিতাসের লিকেজের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

একচুল এদিক-ওদিক হবে না
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যাসের উৎসটা কোথা থেকে সেটা বের করা জরুরি। আমরা সেটা করেছি। এত অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। তদন্তে যা পাচ্ছি তা-ই প্রতিবেদনে উল্লেখ করছি। একচুল এদিক-সেদিক হবে না।’

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কমিটির প্রতিবেদন ধরে মামলার তদন্ত চলবে। প্রতিবেদনে যদি তিতাসের ওই অঞ্চলের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলার বিষয়টি পরিষ্কার হয়, তবে তাকে বা তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম-পরিচয় জানার জন্য তিতাসের কাছে চিঠি লেখা হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবো। আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিবেদন দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানাবো।’

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী