বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে ভোট না দেওয়ায় এক দরিদ্র পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া গ্রাম না ছাড়ায় নির্যাতনও করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অসীম চন্দ্র শীল নামের এক যুবক। সোমবার (২৬ জুলাই) সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী অসীম জানান, রামনা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। রাজধানীর একটি সেলুনে কাজ করেন। তার বাবা শ্রী বিমল চন্দ্র শীল স্থানীয় বৈকালিন বাজারের একজন চায়ের দোকানি। করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন অসীম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার ক্যাডার বাহিনী ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে পরিবারসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন।
তিনি আরও জানান, প্রভাবশালী হওয়ায় এবং অসংখ্য ক্যাডার বাহিনী থাকায় ভীত হয়ে চলতি মাসের ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈকালিন বাজারে উপস্থিত হয়ে ভুল-ত্রুটির নজরুল ইসলামের কাছে ক্ষমা চাইতে যান অসীম। এসময় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ফরিদ (৩৫), বাপ্পি (৪০), ফোরকান (২৬), ইমরান (১৭) ও রাজু জোমাদ্দারসহ (৪০) আরও লোকজন মিলে অসীমকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। স্থানীয় প্রতিবেশী জহিরুল ইসলাম উজ্জল ও ফকরুল ইসলাম কমল তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করে হাত ভেঙে দেয়। এ ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে বামনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বশিরুল আলম।
পরে অসীম চন্দ্র শীল পার্শ্ববর্তী আরএন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে তাকে ধরে এনে নজরুল ইসলাম নিজে লোহার পাইপ দিয়ে আবারও নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এসময় এসআই সিদ্দিক ও ওসি বশিরুল আলম ঘটনাস্থল থেকে অল্প কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একই সময়ে বৈকালিন বাজারে অসীমেরবাবার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন চায়ের দোকানটিও ভেঙে দেন নজরুল। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মালেক মেম্বার (৫০) নজরুল ইসলামকে থামাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন বলে জানান অসীম।
তিনি বলেন, বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাও নিতে পারেননি অসীম। এখন পর্যন্ত থানায় মামলা করতেও যেতে পারেননি। প্রথমে মঠবাড়িয়া হাসপাতালে এবং পরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি।
আরেক ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম উজ্জল বলেন, মারধরের সময় অসীমকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তাকেও পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন নজরুল ইসলাম ও তার বাহিনী। নির্বাচনে যারা নজরুল ইসলামকে সমর্থন করেননি তাদেরকে নির্বাচনের পর ‘খেলা দেখাবেন’ বলেও নির্বাচন চলাকালীন হুমকি দেয় তার ক্যাডার বাহিনী।
এদিকে নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এরকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি। বরং অসীম চন্দ্র শীল ও তার সহযোগীরা তার লোকজনের ওপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে গিয়ে দু-একজন সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারে। এর বেশি কিছু নয়।
এ বিষয়ে জানতে বামনা থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বামনা থানার ওসি বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন। তবে কেউই এখন পর্যন্ত তার কাছে মামলা করতে আসেননি।
