X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ভালো মানের উপহারের ঘরে খুশি মুক্তাগাছার সুবিধাভোগীরা

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
০৩ আগস্ট ২০২১, ০৯:৪১আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০৯:৪১

‘নির্মাণশ্রমিক হিসেবে ৫০ বছর কাজ করেছি। গত ১০ বছর কোনও কাজ করতে পারি না। মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চলে। ৫০০ টাকা ভাড়ায় এক বাড়িওয়ালার ঘরে ছিলাম। তিন মাসের ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা ঘর থেকে বের করে দেন। এরপর অন্যের বাড়ির বারান্দায় ছিলাম। অবশেষে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে আমার। ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি।’

কথাগুলো বলেছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার কুমারগাতা ইউনিয়নের মনতলার হতদরিদ্র আব্দুস সালাম (৮০)। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিসহ ঘর পেয়েছেন তিনি।

আব্দুস সালাম বলেন, ‘এক ছেলে এক মেয়ে আমার। বিয়ে দিয়েছি। যে যার মতো সংসার করছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী মানুষের কাছে হাত পেতে চলছি। উপহার ঘর পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। ঘর নির্মাণের কাজ ভালো হয়েছে। কারণ আমি দীর্ঘসময় নির্মাণশ্রমিক ছিলাম। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। নিজের চোখে দেখেছি, এক বস্তা সিমেন্টের সঙ্গে চার বস্তা বালু মিশিয়ে ঘরের গাঁথুনি ও মেঝের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। মজবুত করে ঘর বানানো হয়েছে। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেছেন ইউএনও।’

মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দুই দফায় মুক্তাগাছার নয় ইউনিয়নে ৯৫টি ঘরের বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দুল্লা ইউনিয়নে সাত, তারাটিতে ২৭, কুমারগাতায় ২১, বড়গ্রামে এক, কাশিমপুরে চার, খেরুয়াজানিতে চার, মানকোনে পাঁচ, ঘোগায় ১৫ ও দাওগাওয়ে ১১টি।

 সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রথম দফায় বরাদ্দ পাওয়া ৫০টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। এসব ঘরে উপকারভোগীরা বসবাস করছেন। তবে দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দের ৪৫টি ঘরের নির্মাণকাজ অর্ধেক বাকি।

তারাটি ইউনিয়নের নিজ শষা আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ২৭টি ঘরের ১০টি দরিদ্রদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭টির নির্মাণকাজ চলছে।

প্রকল্পের উপকারভোগী রোকসানা পারভীন (৫৫) বলেন, ২০০৫ সালে স্বামী নুরুজ্জামান অসুস্থ হয়ে মারা যান। জায়গাজমি না থাকায় বাপের বাড়ি খামারবাজার এলাকায় দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস শুরু করি। ব্র্যাক স্কুলে সাড়ে ৭০০ টাকায় বেতনে শিক্ষকতা করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করানোসহ সংসার চালিয়েছি। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরি চলে গেলো। এরপর আবেদন করে জমিসহ সরকারি ঘর বরাদ্দ পাই।

তিনি বলেন, ভিক্ষা করে খেলেও প্রত্যেক মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন আছে। আমি কল্পনাও করিনি ঘর পাবো। দুই ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছি। ঘর পেয়ে খুশি হয়েছি। ঘরগুলো ভালোভাবে বানানো হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে বাথরুম দেবে যায়। ইউএনওকে জানানোর পর ঠিক করে দিয়েছেন।

একই প্রকল্পের ৩ নম্বর ঘরের সুবিধাভোগী হাবিবুর রহমান (৮৫) বলেন, প্রতিটি ঘরে দুটি থাকার রুম, বাথরুম ও রান্নাঘর আছে। ঘরের বারান্দা আছে। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ঘরের ভেতরে গোসলখানা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

দুল্লা ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী নওসের আলী (৭২) বলেন, আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটিমাত্র টিউবওয়েল। খাবার, রান্না ও গোসলের পানি এই টিউবওয়েল থেকেই ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে বাথরুমে পানির ব্যবস্থা না থাকায় এক টিউবওয়েলের ওপর চাপ পড়ে। বেশির ভাগ সময় লাইন ধরে পানি নিতে হয়। আরও দুটি টিউবওয়েল থাকলে ভালো হতো।

কুমারগাতার মনতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সোলেমা বেগম (৬০) বলেন, ‘২১টি ঘরের মধ্যে ১১টির কাজ শেষ হয়নি। বৃষ্টির জন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না মিস্ত্রিরা। ইউএনও সবসময় দেখার জন্য আসেন। সিমেন্ট, বালু ও ইট ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি-না তা দেখেন। অনেক সময় ইউএনও আমাদের জিজ্ঞাসা করেন কাজ ঠিক হচ্ছে কি-না। সিমেন্ট, বালু পরিমাণ মতো না দিলে গাঁথুনি খুলে আবার করার নির্দেশ দেন ইউএনও। ঘরগুলো মজবুত করে বানানো হচ্ছে।’

তারাটি শংকরপুরের বাসিন্দা সুরুজ আলী বলেন, প্রতিটি ঘরের জন্য সরকারি বরাদ্দ এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু বরাদ্দের চেয়ে বেশি ব্যয়ের কথা শুনেছি। মিস্ত্রিরা বলছেন, প্রতি ঘরে বরাদ্দের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এজন্য প্রকল্পের ঘরগুলো মজবুত হচ্ছে।

 পুরো প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজের অর্ধেক বাকি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মনসুর বলেন, বর্ষা শুরুর পর আট দিন ও রোজার ঈদের ছয় দিন ছুটি থাকায় মোট ১৪ দিন প্রকল্পের কাজ হয়নি। তবে এখন কাজ চলছে। কাজের মান ভালো হচ্ছে বিধায় ধীরগতি। আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে ঘরের কাজ শেষ করে সবার হাতে চাবি তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের মধ্যে পানির জন্য টিউবওয়েল বসানোর বরাদ্দ ছিল না। নিজের উদ্যোগে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিটি প্রকল্পে একটি করে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করেছি। ঈদের পর সাতটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আরও দুটি করে টিউবওয়েল এবং দুটি প্রকল্পে সাবমারসিবল পাম্প বসানো হবে। ফলে পানির সমস্যা থাকবে না। ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ টানার জন্য কোনও বরাদ্দ ছিল না। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে ফ্রি কাজ করিয়েছি।

প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দের চেয়ে বেশি ব্যয় হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘরের কাজ করার সময় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বালু ভরাট করে সহায়তা করেছেন। ইট কেনার সময় কম দাম রাখতে ভাটা মালিকদের অনুরোধ করেছি। তারা অনুরোধ রেখেছেন। এছাড়া সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ঘরের নির্মাণকাজে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। এজন্য ঘরগুলো মজবুত করে বানাতে পেরেছি। কাজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কারণ সরকারি বরাদ্দের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে ঘর বানাচ্ছি। কোনও সমস্যার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করছি। প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, নিজের পরিবারের লোকজন বসবাস করবে, কাজেই মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে।’

 

/এএম/
সম্পর্কিত
কোথাও যাতে ভোক্তাদের হয়রানি না হয়, নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের অর্ধেক জেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত
বিএনপি-জামায়াতের সুমতি হোক, অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা
অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা
‘গুলশান লেক থেকে কোটি কোটি মশা বেরিয়ে গেছে’
‘গুলশান লেক থেকে কোটি কোটি মশা বেরিয়ে গেছে’
৩ তরমুজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
৩ তরমুজ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি অংশের ডাউন র‌্যাম্প খুলে দেওয়া হচ্ছে
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি অংশের ডাউন র‌্যাম্প খুলে দেওয়া হচ্ছে
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার