X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

থানা ভাগ করছে না ডিএমপি, ময়নাতদন্তের চাপ ঢামেকে

আমিনুল ইসলাম বাবু
০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০০আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:৩৫

কোনও ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে বা কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মূলত মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্যই পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত করা হয়। এছাড়াও যেকোনও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ, মৃত্যুর ধরন, অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতদেহের বিস্তারিত তথ্যের জন্য পোস্টমর্টেম করা হয়ে থাকে।

আগে শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ডে ময়নাতদন্ত হতো। চাপ বেড়ে যাওয়ায় , ২০১৮ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগ নতুন করে এই কাজে সম্পৃক্ত হয়। এখন তিনটিতে এসব পরীক্ষার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এরপরও ময়নাতদন্ত মানেই যেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতাল। এতে এক হাসপাতালের ওপর চাপ পড়ায় তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে।

সুনির্দিষ্টভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) পক্ষ থেকে কোন থানা কোন হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করবে—তা ভাগ করে দেওয়া হয়নি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) সহযোগী অধ্যাপক ও  ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে যে কোনওভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয় রাজধানীর হাসপাতালে এসে মারা যাওয়া, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রোগীদের ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হয়। আগে দুটি মেডিক্যাল কলেজ  (ঢামেক ও মিটফোর্ড) ময়নাতদন্ত হতো। চাপ বেড়ে যাওয়ায় , ২০১৮ সাল থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগ নতুন করে এই কাজে সম্পৃক্ত হয়। এখন তিনটিতে হয় এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ  (ডিএমপির) পক্ষ থেকে থানাগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়নি। যার ফলে যে কোনও থানা এলাকার ঘটনা হোক না কেন তারা তাদের সুবিধা অনুযায়ী কোনও একটি ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত বা ভিকটিম (ধর্ষণের চেষ্টা বা ধর্ষণ) পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

তার মতে, এতে করে দেখা যাচ্ছে, একটি  হাসপাতালে চাপ অন্য হাসপাতালের থেকে তিন/চার গুণ বেশি হয়। এতে সেই হাসপাতালটিকে  রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রদান করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা সময়মতো রিপোর্ট পান না। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠাতে পারেন না।

অধ্যাপক মাকসুদ বলেন,  আমাদের (ঢামেকে) এখানে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে মোট ১১ জন চিকিৎসক রয়েছে।  মিটফোর্ডে ৯ জন। সোহরাওয়ার্দীতে রয়েছেন ১০ জন চিকিৎসক।  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বছরে আনুমানিক ২ হাজার থেকে ২৫শ’ মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ফরেনসিকসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয় তিন থেকে সাড়ে তিনশ।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে বছরে আনুমানিক  ১ হাজার থেকে ১২শ মরদেহ ময়নাতদন্ত হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে ভিকটিম পরীক্ষা।  স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত করা হয় ৪ থেকে ৫শ। এর বাইরে রয়েছে ভিকটিমদের ফরেনসিক পরীক্ষা।

অধ্যাপক মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করা হয়। এর বাইরেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিশেষ কারণে রাতেও করা হয়। যেমন, রূপগঞ্জ ট্রাজেডির সময় রাতেও ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল।  ময়নাতদন্ত আর ভিকটিম পরীক্ষা ছাড়াও চিকিৎসকদের অনেক কাজ করতে হয়। কলেজে ক্লাস নেওয়া,  শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়াসহ অনেক কাজ থাকে। সব কাজ শেষে, ওই রিপোর্ট তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠাতে হয়। যার ফলে সময় মতো রিপোর্ট দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটনে (ডিএমপি) যে কয়টি থানা আছে তা এই তিনটি মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগে ময়নাতদন্ত ও মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এরিয়াভিত্তিক সমবন্টন করে দিলে দ্রুতগতিতে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, এ বছর এপ্রিলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগের পক্ষ যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমবন্টনের জন্য পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এর কোনও প্রতিকার হয়নি। কোনও উত্তর পাইনি।

এদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের (মিটফোর্ড) ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ মনে করেন, জনবল সংকট, প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে সময় লেগে যায়।

পোস্টমর্টেমের জন্য থানাগুলোকে ভাগাভাগি করে দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) আনিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এখনও ভাগ করে দেইনি। থানার পাশে যে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে মরদেহগুলো সেখানে পাঠানো হয়ে থাকে। সুনির্দিষ্ট কোনও হাসপাতালে নেওয়া হবে এমন কোনও নির্দেশনা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাছাকাছি সরকারি হাসপাতালগুলোতে পোস্টমর্টেমের  জন্য মরদেহগুলো নেওয়া হয়।

 

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
বাংলাদেশে সামাজিক বিমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড