X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড় হাসপাতালে নেই রোগী রাখার জায়গা

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, পঞ্চগড়
০৫ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩০আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০৭

পঞ্চগড়ে হঠাৎ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে চাপ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু, নারী ও পুরুষ মিলে প্রায় ছয়শ’ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর হাসপাতালের ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১৫৪ জন। রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে রোগীদের মেঝে ও বারান্দাতে সেবা নিতে হচ্ছে। আবার অনেক রোগীকে বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় নানা ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা উপকরণের পর্যাপ্ত মজুত আছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন ২৮০ থেকে ৩০০ জন নারী, ১২০ থেকে ১৪০ জন পুরুষ ও ১৫০ থেকে ১৬০ জন শিশু রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। সে হিসাব অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে বহির্বিভাগ থেকে প্রায় তিন হাজার নারী, প্রায় ৯৮০ জন পুরুষ ও এক হাজার ১২০ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কখনও ঠান্ডা, কখনও গরম ও বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা। দিনে গরমের কারণে কখনও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে, আবার রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে ফ্যান চলায় ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হচ্ছেন তারা। 

 চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগী জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে বেড না থাকায় অনেককে ফ্লোরে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বাড়তি রোগীর চাপে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। 

তবে হাসপাতালে ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণের যথেষ্ট মজুত আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে রোগীরা বলছেন, তাদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে।
 
জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের শেখেরহাট গ্রামের রাজিয়া বেগম বলেন, ছেলের পাঁচ দিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট আর পায়খানা করছিল। তিন দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সকালে হাসপাতাল থেকে একটি করে ইনজেকশন দিয়েছে। নাপা সিরাপ ও নাকের একটি ড্রপ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। 

ছেলের ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝার এলাকার আখতারা বানু। হাসপাতালে সিট পাননি, তিন দিন ধরে শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় আছেন। ছেলের পায়খানা কমেছে এবং বর্তমানে সে কিছুটা সুস্থ।
 
 শেফালী নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, ডায়াবেটিক কমে যাওয়া, খিচুনি এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে মাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তবে হাসপাতালে সিট না থাকায় বারান্দায় আছি।
 
জেলা সদরের মসজিদপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, আধুনিক সদর হাসপাতাল হলেও এখানে চিকিৎসক, বেড ও ওষুধ সংকট রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, জটিল কোনও রোগের চিকিৎসার সুবিধা হাসপাতালে নেই। রোগী নিয়ে এলে তাৎক্ষণিক রংপুর বা দিনাজপুরে স্থানান্তর করা হয়। ফলে বাইরে গিয়ে আমাদের হয়রানি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অর্থ ও সময়ও নষ্ট হয়।
 
হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা জেলা সদরের জালাসী এলাকার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রোগী জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর পরই হাতে ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সব রোগীর তো ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে না। ওষুধ আনার আগেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। হাসপাতালে কী সরকার ওষুধ সাপ্লাই দেন না, প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

 পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আউটডোরে প্রতিদিন জ্বর, সর্দি-কাশির দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। যারা বেশি অসুস্থ তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। প্রচণ্ড জ্বর এবং সর্দি-কাশির রোগী বেশি। অনেক রোগীর জ্বর সহজে নামছে না। 

তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ আছে। রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, গ্যাস, অক্সিজেনসহ সব সেবা দেওয়া হচ্ছে।
 
 পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম মাহবুব উল আলম বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণ এবং কোভিডের আতঙ্ক কমে যাওয়ায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালের বেড সংখ্যা ১০০ হলেও রোগী ভর্তি আছে ১৫৪ জন। এজন্য অনেক রোগীকেই সিটের বাইরে ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে। এটি ব্যবহার উপযোগী হলে রোগীদের বেড সংখ্যাসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাবাদ জানান তিনি। 

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ