X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ উৎপাদনে মিশ্র জ্বালানির সুবিধা পেতে অপেক্ষা আরও দুই বছরের

সঞ্চিতা সীতু
০৫ অক্টোবর ২০২১, ২১:৪২আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩১

বিদ্যুৎ উৎপাদনে মিশ্র জ্বালানির সুবিধা পেতে অন্তত আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিত্র বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে। তবে এক বছরের মধ্যে মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারের আংশিক সুবিধা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার ২০১২ সাল থেকে মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু এক্ষেত্রে গত আট বছরেও খুব বড় সুবিধা আদায় করা সম্ভব হয়নি।’

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে কয়লাচালিত যেসব কেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর একটিও সফল হয়নি। তখন দেশের একটি প্রতিষ্ঠান দুটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জমি ও অর্থসহ কোনও কিছুরই সংস্থান করতে পারেনি। 

এরপর সরকার অন্য দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে। সেই উদ্যোগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সফল হলেও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি’র লাইন নির্মাণে ব্যর্থতার কারণে এখনও পুরো সুফল ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ে স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি সংমিশ্রণের বিষয়টি বেশি আলোচনায় এসেছে। একইসঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও কয়লার দাম আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ফলে কার্যকর জ্বালানি সংমিশ্রণ সম্ভব না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ সামাল দিতে সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করলে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। অন্যদিকে সরকার দাম না বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিলে অর্থনীতি চাপে পড়বে। এতে স্বাভাবিকভাবে সরকারের অন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরোটা উৎপাদনে এলেও এখন ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চালানো সম্ভব হচ্ছে। অন্য ইউনিটটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ থেকে রাজধানীর আমিনপুরে লাইন নির্মাণের কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি পিজিসিবি। এরমধ্যে পদ্মার রিভার ক্রসিংয়ের কাজ করছে সেতু বিভাগ। সেখানে চায়না মেজর ব্রিজ করপোরেশন পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে পাইলিং করে বেজ নির্মাণ করেছে। এরপর এর ওপর টাওয়ার নির্মাণ করবে পিজিসিবি। সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পায়রা কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পুরোটা চালানো সম্ভব হলে সেখানে ইউনিটপ্রতি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকায় বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো। কিন্তু এর বিপরীতে তরল জ্বালানি নির্ভর কেন্দ্র থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ১০ টাকার চেয়ে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। তাই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকার।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল, মাতারবাড়ি এবং রূপপুর চালু হলে আমরা একটি কার্যকর জ্বালানি সংমিশ্রণ পাবো। এতে আমরা জ্বালানির দাম বিবেচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারবো। কখনও এলএনজির দাম বেড়ে গেলে আমরা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। অন্যদিকে রূপপুর থেকে আমরা কম দামে পারমাণবিক বিদ্যুৎ পাবো। এর আগে আমাদের বাড়তি দরে এলএনজি কিনেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।’

সূত্রগুলো বলছে, আগামী ডিসেম্বরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আর রামপাল চালু হলেও সেই বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করার মতো অবকাঠামো নেই। এছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৬৬০ মেগাওয়াটের চাহিদা নেই। সমান ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার ছয় মাস পর।

এছাড়া মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালের জুনে। একই সময়ে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এ জন্য রূপপুরে জোরেশোরে কাজ করছে রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সব মিলিয়ে রামপাল এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে জ্বালানি সংমিশ্রণের আংশিক সুবিধা পাওয়া যাবে। আর মাতারবাড়ি ও রূপপুর চালু হলে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাওয়া যাবে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন উল্লেখ করেন, ‘মিশ্র জ্বালানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। এগুলো অনেক বড় হওয়ার কারণে বাস্তবায়নে কিছুটা সময় প্রয়োজন হবেই। আমরা এখন পায়রা থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। যদিও সঞ্চালন লাইনের কারণে পুরোপুরি পাচ্ছি না। কিন্তু দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। রামপালও এ বছরের শেষে না হলেও আগামী বছরের শুরুর দিকেই চলে আসবে।’

মহাপরিচালকের আশা, ‘তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে এখনই আমরা বিদ্যুৎ পাবো। এদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও দ্রুত চলছে। নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসবে বলে আশা করছি।’

/জেএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী