X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রযুক্তির সঙ্গে বদলাচ্ছে সাইবার অপরাধ’

রিয়াদ তালুকদার
১৫ অক্টোবর ২০২১, ২১:০৩আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১২:১৬

সম্প্রতি কুমিল্লার পূজামণ্ডপে ‘পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধার’ নিয়ে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য। এ ছাড়াও স্যোশাল মিডিয়ায় সাইবার বুলিং, বডি শেমিং, ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে হরহামেশাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো বন্ধে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ব্যাকডোর প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর হাসান জোহা।

বাংলা ট্রিবিউন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে সাইবার অপরাধ কেমন বাড়ছে?

তানভীর জোহা: সাইবার বুলিংয়ের জন্য এ মাধ্যম যেন আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউকে যদি আপনি ছোট করতে চান,  বিদ্বেষ ছড়াতে চান, ফেক নিউজ কিংবা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াতে চান; তা হলে টিকটক, লাইকি কিংবা ফেসবুক-এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। ভুয়া নিউজ ছড়ানোর জন্য এগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে অপপ্রচারকারীরা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের পুলিশের লিগ্যাল কোনও অ্যাগ্রিমেন্ট নেই। এসব বিষয় শনাক্ত করা কঠিন। ছোট ছোট মিডিয়াগুলো এসব প্রমোট করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এতে অপরাধীরা আরও সাহস পায়। পরিকল্পিত উপায়েই এসব ডিজিটাল অপরাধীদের শনাক্ত করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সাইবার অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি কি বদলাচ্ছে?

তানভীর জোহা: প্রযুক্তির সঙ্গে অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। যেমন বিটকয়েনে পেমেন্ট পাচ্ছে অপরাধীরা। একটা সময় ছিল ফেসবুক আইডি হ্যাক হতো, ই-মেইল আইডি হ্যাক হতো; সেটাও সাইবার অপরাধ। এখন দেখা যাচ্ছে- বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান স্পর্শকাতর ডাটা হ্যাক হচ্ছে। ডার্কনেটের ক্রাইমগুলো আরও ভয়াবহ। খুন, হ্যাকিং থেকে শুরু করে এমন কোনও খাত নেই তা এখানে হচ্ছে না। ই-কমার্সও এদের বিচরণ ক্ষেত্র। আগে শুধু আমরা ই-মেইল কিংবা ফেইসবুক আইডি হ্যাকিংকেই সাইবার অপরাধ মনে করতাম। এখন এর ব্যাপ্তি বেড়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এই যে বললেন, ব্যাপ্তি বাড়ছে; এটা কি প্রযুক্তির ব্যাপকতার কারণে, নাকি আরও কিছু আছে?

তানভীর জোহা: সাইবার অপরাধ বাড়ার মূল কারণ এটি বর্ডারলেস অপরাধ। এ কারণে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রকৃত সাইবার অপরাধীদেরকে সহজে শনাক্ত করতে পারে না। এই সুযোগে হ্যাকিং বাড়ছে।  বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও ডিজিটাল ফরেনসিকের ঘাটতিও আছে। হ্যাকারদের ধরতে বিভিন্ন দেশের সাইবার পুলিশেরও এখন বেগ পেতে হয়। এ কারণে অপরাধীরা আরও উৎসাহ পায়।

বাংলা ট্রিবিউন: সাইবার অপরাধে মূলত জড়াচ্ছে কারা?

তানভীর জোহা: এ অপরাধের ধরন অনেক। কৌতূহলবশত অপরাধমনস্ক তরুণরাই এটা ঘটায়। এদের সংখ্যা খুব কম। আবার স্পন্সর্ড হ্যাকারও আছে। এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতায় হয়। এখনকার গ্লোবাল সাইবার অপরাধীদের মধ্যে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়াদের সংখ্যাই বেশি।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেকে এ ধরনের অপরাধের শিকার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন না, এর কারণ কী?

তানভীর জোহা: সাইবার অপরাধের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ। এখানে আরও স্টেকহোল্ডারও আছে—ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি প্রভৃতি। এতগুলো ডিপার্টমেন্টকে যদি সরলরেখায় আনতে চান, তবে বেশ জটিলতা রয়েছে। এক ডিপার্টমেন্ট অন্য ডিপার্টমেন্টে চিঠি দেবে, সে চিঠি একজন দেখবে। তারপর সেটার রেসপন্স করবে। আবার তদন্ত করবে। তখন একটি ঘটনা ঘটলে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হবে। আইসিটি রিলেটেড যেসকল তথ্যের প্রয়োজন, মামলার ক্ষেত্রে সেগুলো পুলিশের হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া উচিত। পুলিশের উচিত এ বিষয়ে ক্যাপাসিটি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানোন্নয়ন করা। যাতে এককভাবে নিজেরাই এ জাতীয় অপরাধে এভিডেন্স সংগ্রহ করে রিপোর্ট দিতে পারে।

বাংলা ট্রিবিউন: সাইবার অপরাধের মামলাগুলো আদালতে গেলে কী ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়?

তানভীর জোহা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণ করা যায় না। এটার কারণ মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের অপ্রতুলতা। মোবাইল ফরেনসিক করতে গেলে ছয় মাস থেকে বছর পেরিয়ে যায়। এর আগে রিপোর্ট পাওয়া যায় না। তারপরও এ ধরনের অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হওয়ার বিকল্প নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আর কী কী বিষয়ে নজর রাখা উচিত?

তানভীর জোহা: বিভাগীয় পর্যায়ে সাইবার অপরাধের ঘটনাগুলো যেভাবে পুলিশ দেখভাল করে, একটি জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা সেটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারেন না। সাইবার অপরাধ হ্যান্ডেল করতে তিনটি জিনিস প্রয়োজন—কাউন্সেলিং, এমপাথি ও অ্যাকশন। পুলিশের কাছ থেকে শিশু ভিকটিমরা কাউন্সেলিং পায় না। যেহেতু পুলিশ অ্যাকশনে রয়েছে, তাদের কাছ থেকে কাউন্সেলিং পাওয়া সম্ভবও নয়। এ কারণে অনেকে অনুৎসাহিত হয় পুলিশের কাছে যেতে। সাইবার অপরাধের অভিযোগগুলো বিশেষ করে জিডিগুলোর অটোমেশন প্রয়োজন বেশি।

/ইউএস/এফএ/আপ-এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী