X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭৫-এ আসাদুজ্জামান নূর: কিংবদন্তিকে ঘিরে প্রথম জন্মোৎসব

বিনোদন রিপোর্ট
৩১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০৪আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০৪

জন্মের ৭৫ বছরে পা ফেললেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। আজ (৩১ অক্টোবর) এই কিংবদন্তির জন্মদিন। 

এ উপলক্ষে রবিবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘তোমারই হোক জয়’ শীর্ষক জন্মোৎসব। এই নন্দিতকে ঘিরে এটাই প্রথম কোনও আয়োজন।

অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে ‘আসাদুজ্জামান নূর জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি’। এতে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। এছাড়াও আবৃত্তিকর্মী, নাট্যকর্মী, সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পীসহ সংস্কৃতির সব শাখার মানুষ অংশ নেবেন বলে জানান উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম কুদ্দুছ।

এই আয়োজন সম্পর্কে আসাদুজ্জামান নূর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি তো এতোদিন এসব এড়িয়ে গেছি। এবার আর এড়াতে পারলাম না। যদিও নিজে কিছু করছি না। আহকাম উল্লাহ সবাইকে নিয়ে একটা কমিটি করেছে। গোলাম কুদ্দুছ আছে, অনুপম সেন সভাপতি। ওরাই সব আয়োজন করছে। আমাকে শুধু হাজির হতে বলা হয়েছে। আর কিছু জানি না। আরও অনেকেই চেষ্টা করেছে। আমি আর কোনোটায় রাজি হইনি। বলেছি সবাই মিলে এই একটা আয়োজনই করবো। পঁচাত্তর বছর বেঁচে থাকাও তো একটা বিশাল ব্যাপার। কোনোবারই উদযাপন করি না, এবারই একটু রাজি হলাম।’

১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আসাদুজ্জামান নূর। জন্মের দুই বছরের মাথায় ১৯৪৮ সালে পরিবারের সঙ্গে এই বাংলার নীলফামারী চলে আসেন। তার বাবা আবু নাজিম মো. আলী এবং মাতা আমিনা বেগম। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর সবার বড়। ছাত্রাবস্থায় জড়িয়ে পড়েন বাম রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে পড়েন থিয়েটার ও আবৃত্তি চর্চায়। পরে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে পান তুমুল জনপ্রিয়তা। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘এই সব দিনরাত্রি’র শফিক কিংবা ‘অয়োময়’ এর ছোট মির্জা চরিত্রে অভিনয় করে লাখো দর্শক-শ্রোতার প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। তবে কিংবদন্তি হয়ে আছেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে।

আসাদুজ্জামান নূর/ ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য ছাড়াও বর্তমানে তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

৭৫ বছরের এই বর্ণীল জীবনটাকে যদি পেছন ফিরে তাকাতে বলা হয় তবে আসাদুজ্জামান নূরের স্মৃতিগুলো কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাব দিলেন এভাবে, ‘আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে নীলফামারী শহরে। সেটি আমার জন্য একটি অসাধারণ সময় ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাহিত্যচর্চা, দেয়াল পত্রিকা বের করেছি। কলেজে উঠে ইলেকশন করে জেনারেল সেক্রেটারি হয়েছি। সবকিছু মিলেই চমৎর সময় কেটেছে। তারপর ঢাকায় এসেও তো একটা ঐতিহাসিক সময় পার করেছি। ছয় দফা থেকে মুক্তির সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস, এটি তো আমি মনে করি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। স্বাধীনতার পরে ৫০ বছর আমরা পার করলাম। এই ৫০ বছরে আমাদের অনেক দুঃখ-বেদনাও আছে। জাতীয়ভাবে যদি চিন্তা করি আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি, এটিই আমাদের বিরাট বেদনার বিষয়। পাশাপাশি যেটা হয়েছে, আমাদের চিন্তার জগৎ অনেকটা পাল্টে গেছে। স্বাধীনতার আগে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বা যুদ্ধের পর পর আমরা যেভাবে দেশটাকে দেখতে চাইতাম সেই জায়গাতে একটা বড় রকম আঘাত এলো। ঘাত-প্রতিঘাত সংগ্রাম এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়েই চলে যাচ্ছে, যেখান থেকে এখনও বের হতে পারলাম না। সাম্প্রদায়িক শক্তির কথা বলছি, যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তাদের সঙ্গে কিন্তু আমাদের একটা দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। পৃথিবীর কোনও দেশে মনে হয় এমন কোনও দল নেই যারা নিজের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না। যে পাকিস্তানকে পরাজিত করে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে পেলাম সে পাকিস্তানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে, তাদের মধ্যে সংঘাত আছে কিন্তু দেশ নিয়ে বা জাতির পিতা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। দুঃখজনক হলেও আমাদের দেশে এখনও এই পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’

৭৫ বছরে এই নেতা-অভিনেতার অর্জন কম নয়। এককথায় বলা যায় অভিনয়, ব্যবসা ও রাজনীতি- সবদিকদিয়েই তিনি সফল। করেছেন মন্ত্রিত্ব, পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক। যদিও আসাদুজ্জামান নূর মনে করেন, তার জীবনের বড় অর্জন- অসাধারণ সব মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগটাকে।  

তার ভাষায়, ‘আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দীর্ঘ সময় ধরে এত বড় সব মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। সেটি আমার জীবনের খুব বড় সঞ্চয় বলে মনে করি। শিল্পী জয়নুল আবেদীন থেকে কবি শামসুর রহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, সৈয়দ শামসুল হক—মানে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য জগতের মানুষগুলোর সান্নিধ্য পেয়েছি। অভিনয় ও চলচ্চিত্র জগতের গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল, সৈয়দ হাসান ইমামের মতো মানুষের সঙ্গে আমার ওঠাবসার সুযোগ হয়েছে। হয়তোবা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আমি কখনও যেতে পারিনি, তবে অন্য অনেক বড় নেতার সঙ্গে ওঠাবসার সুযোগ হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এগুলোই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। পদ-পুরস্কার নয়।’

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!