X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলায় যুব অধিকার ও বিএনপি-জামায়াত সম্পৃক্ত, দাবি পুলিশের

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
০৭ নভেম্বর ২০২১, ২২:৩০আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২১, ২৩:৩৭
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকায় জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ১৩ অক্টোবর রাতে নগরীর হালিশহর এলাকায় শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা মোক্তার হোসেনের বাসায় বৈঠক করে জেএমসেন হলে হামলার পরিকল্পনা করেন ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের কাজে লাগিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে জেএমসেন হলে হামলা চালান যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন। জেএমসেন হলে হামলার ঘটনায় রিমান্ডে থাকা আসামিরা এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানান ওসি।

নেজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেএমসেন হলে হামলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এই ঘটনায় রিমান্ডে আনা আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদ আমাদের এসব তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন ১৩ অক্টোবর রাতে শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা মোক্তারের বাসায় বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা জেএমসেন হলে হামলা চালান।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জামায়াত-শিবির, বিএনপির কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। আমরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে।’

কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে ১৫ অক্টোবর জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা এলাকায় জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়। এ সময় হলের গেটের ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৮৩ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক ৮৩ জনসহ ৮৪ জনের নামে মামলা করেন কোতোয়ালি থানার এসআই আকাশ মাহমুদ ফরিদ। ওই মামলায় ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

ওই দিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যান্য সময় আন্দরকিল্লা মসজিদের ওখানে মিছিলের সময় পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখতাম। কিন্তু ঘটনার দিন সেখানে পুলিশ ছিল না। ওই দিন আমরা যদি সোচ্চার না থাকতাম তাহলে হামলাকারীরা মন্দিরে বড় ধরনের ভাঙচুর করতো। আমরা তাদের প্রতিহত করায় ব্যানার, পোস্টার ছেঁড়ার পাশাপাশি গেট ভাঙচুর করে চলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। এখন পর্যন্ত পুলিশ যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সবই ঠিক আছে। আমরা চাই, যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।’

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৫ অক্টোবর দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের সামনে এজাহারভুক্ত আসামিসহ ৪০০-৫০০ জনের একটি মিছিল আন্দরকিল্লা মোড়ে রাস্তার ওপরে আসে। এ সময় সবার হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। ইট-পাটকেল নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করে বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খল স্লোগান দেয় তারা। তাদেরকে মসজিদের দিকে যাওয়ার অনুরোধ করলে সিটি করপোরেশনের পুরাতন ভবনের সামনে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। হাতের লাঠি দিয়ে পুলিশকে মারধরের চেষ্টা করে। তাদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে নিজেদের রক্ষা, জনগণের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি, ৪৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কর্তৃক দুর্গাপূজা উপলক্ষে লাগানো দেবী দুর্গার ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং জেএমসেন হলের গেট ভাঙচুর করে আসামিরা।

মামলায় যুব অধিকার পরিষদের মহানগর শাখার ১০ নেতাকর্মীসহ এ পর্যন্ত ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই বাবলু পাল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, এই মামলায় এজাহারভুক্তসহ এখন পর্যন্ত ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যুব অধিকার পরিষদের সাত জনসহ ইতোমধ্যে ২৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। আরও সাত জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা কি জানিয়েছে জানতে চাইলে এসআই বাবলু পাল বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কে তা জানার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম পেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো আমরা যাছাই-বাছাই করে দেখছি। যাছাই-বাছাই শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত যাদের নাম আসছে, তাদেরও গ্রেফতার করবো।’

ঘটনায় অন্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতার যুব অধিকার পরিষদের ১০ নেতাকর্মীর মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। অন্য আসামিদের কয়েকজন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক রাজনৈতিক মামলাও আছে। রিমান্ডে এনে আমরা মূলত আসামিদের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। আশা করছি, মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করতে পারবো।
 
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওই দিন আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল) চট্টগ্রাম এসেছিলেন। নেতাকর্মীরা জুমার নামাজের আগ থেকে উনার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত ছিল। সেদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে, সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপরও যদি এই মামলায় বিএনপি ও বিরোধীদলীয় লোকজনকে জড়ানো হয়, তাহলে এটি নিশ্চয়ই তাদের নীলনকশার অংশ। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। কেননা কুমিল্লার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ জড়িত৷ কিন্তু এরপর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যেসব মামলা হয়েছে, সেখানে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বেলারুশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে বড় বিনিয়োগের পথে পোল্যান্ড
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে মজুত করা এক লাখ ডিম উদ্ধার
কলেজশিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
কলেজশিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি