বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আসন্ন ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ছয় নেতাকর্মীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। রবিবার (৪ মে) বিকালে যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, এনসিপি শ্রমিক উইং ও গণঅধিকার পরিষদের দাবির মুখে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল বাছেদ জানান, দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়াও অনেক প্রার্থী ও ভোটার পলাতক ওই সব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়ন দাখিল ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছিল। অভিযোগের সত্যতা থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন বাতিল করা প্রার্থীরা হলেন- সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলাল, সহ-সভাপতি প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি আবদুল গফুর প্রামানিক, প্রচার সম্পাদক প্রার্থী শহর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন, কার্যকরী সভাপতি প্রার্থী শ্রমিকলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম।
এর মধ্যে গত শনিবার বিকালে শহরের গোদারপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে জাল স্বাক্ষরের অভিযোগের শুনানিতে এসে জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম গ্রেফতার হয়েছেন।
পুলিশ কার্যকরী সভাপতি প্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করলেও শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা তাকে ছিনিয়ে নেন।
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা জানান, আগামী ২৩ মে অনুষ্ঠিতব্য ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন প্রার্থী স্বজনদের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর গণঅধিকার পরিষদের নেতারা তাদের বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিত আপত্তি জানান। তারা প্রার্থিতা বাতিলে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
একই দাবি জানায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইং। গত শুক্রবার বিকালে নেতারা মিছিল নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অস্থায়ী কার্যালয় ঘেরাও করেন। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান। নেতারা উল্লিখিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল দাবি ও সেগুলো ছিঁড়ে ফেলতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের চাপ দেন। এর আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অভিযোগের শুনানির সময় ধার্য করে।
এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক ডা. আবদুল্লাহ আল সানী বলেন, ওই প্রার্থীরা গত জুলাই-আগস্ট গণহত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। এসব সন্ত্রাসীরা পলাতক রয়েছে। তাদের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তাই তাদের মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন করা হয়।
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আসন্ন ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল বাছেদ বলেন, কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়ন দাখিলের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই ও শুনানির জন্য শনিবার বিকালে উভয়পক্ষকে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়। সেখানে কয়েকজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বিধি মোতাবেক তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী নজরুল ইসলাম ও কার্যকরী সভাপতি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন শুনানিতে হাজির হলেও তারা অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ দেখাতে পারেননি। যাচাই-বাছাই শেষে ছয় জনের প্রার্থিতা বাতিল করে ১১৭ জনের বৈধ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ২৩ মে বগুড়া জেলা স্কুলে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ১৩তম ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন হবে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ পদে ২১ হাজার ৪৭২ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উল্লিখিত ছয় প্রার্থীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা জানান, বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন একটি বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী শ্রমিক সংগঠন। দীর্ঘদিন ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়ে আসছে। সেখানে সব দল ও মতের মানুষ আছেন। তাই ওই সংগঠনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থী হতেই পারেন। কিন্তু বিএনপি নেতা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান। কৌশলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরাতে ষড়যন্ত্র করছেন। চেয়ারম্যানের ডাকা শুনানিতে মামলা থাকা প্রার্থীরা হাজির হতে পারবেন না। তারা এটা নিশ্চিত হয়ে তাদের স্বাক্ষর প্রমাণে ডাকা হয়েছিল।
তারা আরও বলেন, আইন অনুসারে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। মূলত এ প্রতিষ্ঠানটি কুক্ষিগত করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কথা বললেও নির্বাচনে বৈষম্য বৃদ্ধি করছে।