বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে বিদেশে যেতে দেওয়ার দাবিতে গণঅনশনে বসেছে দলটির নেতাকর্মীরা। করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তির পর এই প্রথম মাঠের কর্মসূচিতে গেলো দলটি। শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅনশনের শুরুতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকের কমর্সূচি অনশন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে এই অনশন পালন করবেন, কেউ দাঁড়িয়ে থাকবেন না, উঠে যাবেন না। বসে থেকে কর্মসূচি পালন করবেন।’ তিনি যখন ডায়াসে দাঁড়িয়ে দলের নেত্রীর মুক্তির জন্য এমন আহ্বান রাখছেন, সে সময় থেকেই অংশগ্রহণকারীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ‘সেলফি’ আর ‘ফটোসেশনে’ ব্যস্ত। এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই দলে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের চেনামুখ। নগরীর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম বিএনপির কমিটির নেতারাও পিছিয়ে ছিলেন না।
সকাল সোয়া ৯টায় মির্জা ফখরুল অনশনের সূচনা বক্তব্য শেষ করার পর প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি মাইকে এসে জানালেন, যারা দাঁড়িয়ে আছেন তারা কেউ সংহতি প্রকাশ করতে আসেননি। আজকের কমর্সূচি অনশনের। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে থেকে নেতাকর্মীরা সরে গেলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার সেলফি ও ফটো তুলতে আগ্রহীদের অবস্থান। সিনিয়র নেতাদের পেছনে রেখে শাখা নেতাদের এই আগ্রহ ছিল উপচেপড়া। মুখে হাসি, হাতে ক্যামেরা, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের কয়েকশ গজ পর্যন্ত বিস্তৃত এই অনশন কর্মসূচিতে এ ছিল প্রতি মুহূর্তের চিত্র।
ফটোসেশনে ব্যস্ত ছিলেন ছাত্রদল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক অনুসারী, এনামুল হক। আলাপে জানালেন, অনশনের শুরুতে নেতাকর্মীদের উৎসাহ অনেক। আর তাই সবাই ফটোসেশন, সেলফিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তার ভাষ্য, ‘বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনশনে সিরিয়াস হবেন নেতাকর্মীরা।’ নিজেকে ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন এনামুল।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে ছাত্রদলের এক অনুসারী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে অনশনের শুরু থেকেই কালো চশমা চোখে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন ছাত্রদলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। তার সঙ্গে তাল মেলাতে সংগঠনের এক সহ-সভাপতিসহ আরও কয়েকজন ছিলেন সমরূপে।’
যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিল চৌধুরীকে দেখা গেছে পুরোটা সময় তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন অনশনে, অনুসারী কাউকে দিয়ে ছবি তোলাচ্ছেন, আবার কাউকে দিয়ে ভিডিও।
দীর্ঘদিন পর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির দাবিতে দলের মাঠের এই কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের আগ্রহ ব্যাপক। লালবাগ থানা বিএনপির এক কর্মী এসেছেন অনশনে, নিজের নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক নেতা ভাড়া করে ফটোগ্রাফার ও ভিডিও ক্যামেরাম্যান নিয়ে এসেছেন। এগুলো ফেসবুকে, ইউটিউবে শেয়ার করা হবে।'
সরেজমিনে অনশনের প্রথম এক ঘণ্টাতেই এমন চিত্র চোখে পড়েছে। অনেকেই আঙুল তুলে ‘ভি চিহ্ন’ প্রদর্শন, দল বেঁধে ফটোসেশনসহ আরও উৎসাহমুলক কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন। ফাঁকে কেউ কেউ আবার কমর্সূচির উল্টোদিকে বিএনপির ঢাকা মহানগর অফিসের সামনে চায়ের দোকানে কিংবা আশপাশের হোটেলে সেরে নিয়েছেন সকালের নাস্তাও।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী মাইকে এসে দাঁড়িয়ে থাকা অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, চেহারা দেখে বোঝা যায়, চিনতে পারি। নাম বলতে পারি। সবাই অনশন করুন। দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়ুন।
দেখা গেলো আর কিছু চিত্র, অনেক নেতাই কোনও কোনও ক্যামেরাম্যানকে ডেকে নিয়ে নিয়ে খবরের ভিডিওতে নিজের মুখ দেখাতে বাড়তি আবদারও করেছেন নীরবে। অনেকে হাতের লেখা ব্যানার নিয়ে ফটো তোলায় তৎপর ছিলেন অনশনে।
গণঅনশন কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষপর্যায়ের সব নেতারা অংশগ্রহণ করছেন। সকাল ৯টায় কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকে বিএনপির মহাসচিব ডায়াসে এসে অনুরোধ করেন, স্লোগান না দিতে। তার এই অনুরোধ বরাবরের মতো উপেক্ষিত। অনশনে নিয়মিত বিরতিতে চলেছে স্লোগান। তবে কার্যালয়ের সামনে একটি লেন যানচলাচলের জন্য খোলার রাখার অনুরোধটি রেখেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের সহযোগিতায় একটি লেনে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।