X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নির্ভর করছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর

শেখ শাহরিয়ার জামান
২৫ নভেম্বর ২০২১, ২১:৫০আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ২১:৫০

‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নের জন্য সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর। সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপরে। শুধু কেনার জন্য কেনা নয়, এরসঙ্গে বাংলাদেশও যেন প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট সরকার।

এ বিষয়ে ফ্রান্স থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমাদের সব সময় একটি প্রচেষ্টা যে, আমি কিনবো ঠিক আছে, একইসঙ্গে আমাদের এখানেও যেন টেকনোলজি ট্রান্সফার হয়।

তিনি বলেন, ‘আমার যা আলোচনা, সে আলোচনায় এ বিষয়টি ছিল যে, খালি জিনিস কেনা-বেচা নয়, সেখানে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিও রয়েছে।’

অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে ইউরোপের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে যেখানে যেটা আমাদের প্রয়োজন, যেটা সুবিধা মতো পাই এবং সুবিধামতো দামে পাই, সেটা  আমরা কিনছি।’

যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান বা বাণিজ্যিক জাহাজের পার্টস— সব এক জায়গায় তৈরি হয় না, কিন্তু একটি জায়গায় অ্যাসেম্বল হয় বলেও তিনি জানান।

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি এটাও তাদের আহ্বান করছি যে, আমরা জায়গা দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের নতুন মেধাবী প্রজন্মকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।’

এভিয়েশন এবং এয়ারস্পেস ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে বাংলাদেশে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যুদ্ধবিমান অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারে রিফার্বিশ করা সম্ভব এবং এর পাশাপাশি আমাদের স্পেস সম্পর্কে গবেষণা দরকার। এটার সঙ্গে সঙ্গে দেশের জন্য যেন আমরা প্রযুক্তি আনতে পারি, সে চেষ্টাও করছি।’

এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়

আকাশ গবেষণার জন্য লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন ও এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার।

সম্প্রতি কানাডায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খলিলুর রহমান এক টুইটে জানান, তিনি ওই দেশের বিখ্যাত কাসকেড অ্যারোস্পেস ফ্যাসিলিটি পরিদর্শন করেছেন এবং সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

প্রযুক্তি হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক টুল

বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে। এরমধ্যে ইটালি ও যুক্তরাজ্য একই ধরনের যুদ্ধজাহাজ বিক্রি করতে চায়। চার-জাতি জোটের পক্ষ থেকে ইতালি ইউরোফাইটার বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। ফ্রান্সের পক্ষ থেকে রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার জন্যও প্রস্তাব আছে বলে জানা যায়।

কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তর হয় এবং কতটুকু— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, কেবলমাত্র পারস্পরিক সম্পর্ক বা কেনাবেচার ওপর প্রযুক্তি হস্তান্তর নির্ভর করে না। প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তি একটি ভূ-রাজনৈতিক বিষয়।’

প্রযুক্তি কেউ এমনি এমনি দিতে চায় না, তবে পণ্য কেনার সময় এই প্রভিশনটা রাখা সম্ভব বলে তিনি জানান।

তিনি আরও  বলেন, ‘তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করার প্রয়োজন আছে।’

একটি সামগ্রিক পণ্য অর্থাৎ একটি যুদ্ধজাহাজ বা যুদ্ধবিমান বা বাণিজ্যিক জাহাজের পার্টস সব এক জায়গায় তৈরি হয় না, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘অনেক পার্টসই বাংলাদেশে তৈরি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গোটা বা খণ্ডিত প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হলে বাংলাদেশে উৎপাদন ও পরবর্তীতে অ্যাসেম্বল করা সম্ভব।’

ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য

এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চীন থেকে প্রতিরক্ষা পণ্য ক্রয় করেছে। সম্প্রতি উন্নত প্রযুক্তি পণ্যের বিষয়ে ইউরোপের প্রতি আগ্রহ কোনও ধরনের অস্বস্থি তৈরি করবে কিনা, জানতে  চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র এই সচিব বলেন, ‘একটি চলমান পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নতুন সম্ভাবনা ও আশঙ্কা জন্ম হতে পারে, এটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে এক্ষেত্রে বাংলোদেশের জাতীয় স্বার্থ সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয় হবে।’

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের জায়গা বাংলাদেশকেই খুঁজে বের করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সবসময়ই কঠিন প্রক্রিয়া।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘এই ভারসাম্য বাংলাদেশ রক্ষা করে চলছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সবসময় এটি এক জায়গায় থাকবে। কারণ, পরিস্থিতি সব সময় পরিবর্তিত হচ্ছে এবং যখন যেখানে প্রয়োজন, সেদিকে মনোযোগ দিয়ে নতুন ভারসাম্য রক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।’

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যেমন ২০১৫ সালে দক্ষিণ চীন সুমদ্র নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত অবস্থানকে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কাছে পরিষ্কার করেছিল। আমার বিবেচনায় তৎকালীন বাংলাদেশের অবস্থান সাধারণভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।’ 

আরেকটি উদাহরণ দিয়ে সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘চীন থেকে যখন আমরা বিভিন্ন প্রকল্পে বড় আকারে অর্থায়নের জন্য আলোচনা করছিলাম, তখন জাপান ও ভারতের সঙ্গে একই ধরনের আলোচনা  করেছিলাম, যা একাধিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছিল। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারসাম্যপূর্ণ নীতির প্রয়োগের ফলে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে উপকৃত হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘ভারসাম্য একটি পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া এবং স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি ও সময়ের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি পরিবর্তিত হয়। কূটনীতির লক্ষ্য হলো— পরিবর্তিত নতুন নীতির পরিষ্কার ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা অংশীদারদের জানিয়ে দেওয়া।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
সর্বাধিক পঠিত
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে