X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজন্ম শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

উদিসা ইসলাম
৩০ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৫৮আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১৭:১৭

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্য দিয়ে। এক জীবনে নিজের ‘করণীয়টুকু’ করে যেতে পারার আকাঙ্ক্ষা থাকে অনেকেরই; কিন্তু করে যেতে পারেন ক’জন? সেক্ষেত্রে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সবার সামনে উদাহরণ হয়ে বেঁচে থাকবেন। শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি; কোথায় বিচরণ করেননি তিনি। এই নজরুল গবেষক নিজে প্রায়শই বলতেন, সততার সঙ্গে অনুসন্ধান করার বিকল্প নেই। আজ মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) তার ৮৭ বছরের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটলো।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম নিজে শিক্ষকতা পরিচয়েই বেঁচে থাকতে চাইতেন। তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সেকথা উঠে এসেছে। তিনি বলতেন, শিক্ষকের জীবনে দুটো কাজ—‘গবেষণা ও শিক্ষকতা, আমি আজন্ম শিক্ষক।’ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থেকে তিনি ‘কিছু একটা’ করার চেষ্টা করে গেছেন। তিনি বলতেন, ‘আমি চাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে যদি একটা ভালো কিছু যোগ করা যায়।’

তার কাজের পরিধি ছিল ঈর্ষণীয় এবং যে কারোর জন্য তিনি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবেন। ১৯৫৭ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত হন। তিনি একসময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে ছিল তার আত্মিক সম্পর্ক। জাতীয় অধ্যাপক হওয়ার পরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকবো ইউল্যাবের সঙ্গেই থাকবো। প্রফেসর ইমিরেটাসের বদলে ন্যাশনাল প্রফেসর শব্দটা শুধু যুক্ত হয়েছে নামের সঙ্গে। যারা এজন্য অবদান রেখেছেন তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রইলো, সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ আমি ইউল্যাবের প্রতি।’

২০১৮ সালের ১৯ জুন তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। জীবনের শেষ সময়েও তিনি কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর এই পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

সবাই নিজেকে নিয়ে মজা করতে পারেন না। রাশভারী রফিকুল ইসলামকে জন্মস্থান কোথায় জিজ্ঞেস করলে তিনি মৃদু হেসে বলতেন, ‘কোনও এক রেলওয়ে জংশনে।’ সেটা কেন বলছেন তার ব্যাখ্যাও দিতেন। তাদের পৈতৃক নিবাস চাঁদপুরের মতলব। বাবা চিকিৎসক ছিলেন রেলওয়েতে। বিভিন্ন জংশনে তার কাজ ছিল। ফলে যেকোনও একটা রেলওয়ে জংশনে তার জন্ম।

দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সব আন্দোলনে তিনি হয় হাজির ছিলেন বা নিজে করেছেন। অনেকেই জানেন না ভাষা আন্দোলনের যেসব ছবি এখন দেখা যায় তার বেশিরভাগই তার তোলা। তিনি তার সেই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছিলেন এক অনুষ্ঠানে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪৮-এর ভাষা আন্দোলন দেখেছি। আর ৫২-তে ভাষা আন্দোলন করেছি। সেসময়ের অধিকাংশ ছবি আমার তোলা।’

আর একাত্তরের জুলাইয়ের শেষে যখন তাকেসহ কয়েকজন শিক্ষককে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে গেলো, তখন ধরেই নিয়েছিলেন আর ফেরা হবে না। সেসময় তাদের মৃত্যু ঠেকিয়েছিল প্রবাসী কিছু বন্ধুর উদ্যোগ। তিনি সব সাক্ষাৎকারে সেই কথা বলতেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ৫ জনকে জুলাইয়ের শেষে ধরে নিয়ে গেলো। আমাদের সহকর্মী যারা ওয়াশিংটনে ছিলেন নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহানসহ আরও কয়েকজন, তারা সিনেটর কেনেডির মাধ্যমে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছিল। এরপর আমাদের ক্যান্টনমেন্ট থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জীবনে নিয়ে আসা হয়।’

রফিকুল ইসলাম তার নজরুল গবেষণা দিয়ে পরিচিত হয়েছিলেন জনমানুষের কাছে। যে নজরুল এই দেশের জাগরণের মূলে ছিলেন বলে রফিকুল ইসলাম বিশ্বাস করতেন। আজীবন কাজ করে যাওয়া এই শিক্ষক বাতিঘর হয়ে থাকবেন তার শিক্ষার্থীদের মানসে।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন