সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শফিউজ্জামান খান লোদী এবং চলচ্চিত্র পরিচালনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
২৬ অক্টোবর ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছরই এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছর অনিবার্য কারণবশত ২৬ অক্টোবর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি হয়নি। এটি অনুষ্ঠিত হলো গতকাল (১২ জানুয়ারি) ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন সৈয়দ হাসান ইমাম। পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও পুরস্কারের অর্থমূল্য তুলে দেন আকবর হোসেন খান পাঠান এমপি (ফারুক), আনোয়ারা সৈয়দ হক ও সুজাতা।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘ফরিদুর রেজা সাগর ভাই অসাধারণ একজন মানুষ, তার বাবাও ছিলেন অসাধারণ। সন্তান হিসেবে আমি যদি আমার বাবার জন্য সাগর ভাইয়ের মতো এরকম কিছু করে যেতে পারতাম, তাহলে নিজেকে আমি ধন্য মনে করতাম। যারা ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন তাদের অভিনন্দন জানাই।’
ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ২৬ মে বগুড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর ফজলুল হক মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন দেশের প্রথম সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও প্রকাশক। পঞ্চাশের দশকে এদেশে সিনেমা শিল্পের যাত্রা শুরুর আগেই সিনে সাংবাদিকতা বা চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ ছিল। এখনকার চলচ্চিত্রশিল্প বা অসংখ্য পত্রপত্রিকার যুগে সেই সময়ের এই উদ্যোগ সম্পর্কে কল্পনা করাও কষ্টকর ছিল। ফজলুল হক সেই অসাধ্য কাজটি করেছিলেন। সেই দিন থেকে ফজলুল হককে এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয়।
ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি শিশুতোষ সিনেমা তৈরি করেছিলেন, যা পাকিস্তান আমলে পুরস্কৃতও হয়েছিল। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশু-নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিটি যখন নির্মিত হয় তখন ঢাকায় প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরও একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পত্রিকা সম্পাদনা বা চলচ্চিত্র পরিচালনা কোনোটাতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরে অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেবারে সূচনা পর্বে ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়।
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন তার সহধর্মিণী। জ্যেষ্ঠপুত্র ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের একসময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্থপতি, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা মাহমুদ কাকলী একজন সুগৃহিণী।