এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা করে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। সরকারের উচিত হবে, হয় নতুন আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করুক, তা না হলে আগের পুরনো আইনই বলবৎ থাকুক।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের দেওয়া সুপারিশগুলো মেনে নিলে তা হবে নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে যে ধারণা ও উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন আইন করা হয়েছে তা সফল হবে না।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সংসদে হয়তো এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আগামী অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ, এই আইন বাস্তবায়নের সে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সক্ষমতা এখনও নেই।’ নতুন ভ্যাট আইন সংশোধনের জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবগুলো মেনে নেওয়া হলে সরকারের জন্য এই আইন বাস্তবায়ন করা সহজ হতো।’
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আইনের যেসব সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে, সেসব প্রস্তাব এখন তারা পর্যালোচনা করছেন। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা না গেলে রাজস্ব আদায়ে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়েও বিশ্লেষণ শুরু করেছেন এনবিআরের সদস্যরা।
ব্যবসায়ীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১ জুলাই ২০১৭ থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। তার ঘোষণা অনুযায়ী, নতুন আইনে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ, রেস্তোরাঁর খাবার, আসবাব, রড, বোতলজাত পানি, সাবান, টুথপেস্ট, দেশি পোশাক, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসবে। শুধু তাই নয়,নতুন আইনে ছোট-মাঝারি-বড় সব ক্ষেত্রে একই হারে (১৫%) ভ্যাট দিতে হবে। যদিও বিদ্যমান আইনে একাধিক স্তরে এর চেয়েও কম হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। চলমান এসব সুবিধা বহাল রেখেই নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন চান ব্যবসায়ীরা।
গত ১ জুন বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়নের কথা বললে এ নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। খোদ সরকারদলীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরাও এই আইনের বিরোধিতা করছেন। কেউ কেউ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। দলের মধ্যেই পূর্ণ সমর্থন না থাকায় নির্বাচনের আগে এ আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না সরকার। আর অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, ভ্যাট আইন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন-
জনগণের করের টাকায় ঋণখেলাপিদের পুনর্বাসন!
ডিএনসিসির ২ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য জানাতে হবে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগকে
/টিআর/