জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক আজিজকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা, ভাই কাদের গ্রেফতার

জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান এমএ আজিজ

জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার  আবদুল আজিজকে খুঁজছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এদিকে বুধবার (৩০ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে তিনটায় গ্রেফতার করা হয়েছে তার ভাই ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম.এ. কাদেরকে। অনুসন্ধান করে তাদের দুভাইয়ের বিরুদ্ধে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।  

রাজধানীর কাকরাইল থেকে বুধবার বিকালে শুল্ক গোয়েন্দারা এমএ আজিজের ভাই  এম. এ. কাদেরকে গ্রেফতার করেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে (মামলা নম্বর— ৫৪, ৫৫ ও ৫৬)।  শুল্ক গোয়েন্দারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তারা জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক আবদুল আজিজকেও খুঁজছেন। 

বুধবার জরুরি সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করে এম.এ. কাদেরকে গ্রেফতার ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজকে খোঁজার বিষয়টি তুলে ধরেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি জানান, ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদার ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,‘৯১৯ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস লিটুল জাহান (মিরা) এবং অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের  চেয়ারম্যান এম.এ. কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস সুলতানা বেগম (মনি) ও জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ১৩ জন কর্মকর্তাকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় পৃথক পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,  ‘এছাড়া, আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধেও একই অবস্থান। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও চোরাচালান আইনে তাৎক্ষণিক বিচার করা হবে। মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি নিয়মিত কোর্টও চলবে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানিয়েছে, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেড মোট ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে, যা তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আসামিদের মধ্যে আছেন— রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান মিরা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস থেকে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখা যে রফতানি বিল কেনে, তার মধ্যে চার মাসে টাকা ফেরেনি এমন বিলের সংখ্যা ২১৫টি এবং টাকার পরিমাণ ৪২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৫টি বিলের মধ্যে মাত্র তিনটি বিলের বিপরীতে ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ফেরত এসছে। ফলে ২১২টি বিলের বিপরীতে ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ফেরত আসেনি। এনবিআরের তদন্তে উঠে এসেছে— ক্রিসেন্ট লেদার এবং ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হয়েছে। এছাড়া, রিমেক্স ফুটওয়্যারেরও জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা হতে ২৪০টি বিলের বিপরীতে ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে।

মামলায় জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন— সিনিয়র অফিসার (বরখাস্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মনিরুজ্জামান, মো. সাইদুজ্জাহান, প্রিন্সিপাল অফিসার (বরখাস্ত) রুহুল আমিন, মগরেব আলী, খায়রুল আমিন,এজিএম (বরখাস্ত) আতাউর রহমান সরকার, ডিজিএম মো. ইকবাল, এ কে এম আসাদুজ্জামান, কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, জিএম (বরখাস্ত) মো. রেজাউল করিম, ডিএমডি (বরখাস্ত) ফখরুল আলম এবং বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি জাকির হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার  আবদুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।