৫৭ ব্যাংকের চেয়েও বেশি খেলাপি ঋণ জনতায়

53279136_2343324119063529_7259542444562186240_nদেশের ৫৮ ব্যাংকের মধ্যে ৫৭ ব্যাংকে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়েছে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেই বেড়েছে তার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। আর অন্য ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৪ শতাংশ। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকে খেলাপি বেড়েছে ১০ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে যে শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি রয়েছে তার এক-চতুর্থাংশই জনতা ব্যাংকের। খেলাপি ঋণের মধ্যে কেবল দু’টি গ্রুপের কাছেই রয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো— ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যাননটেক্স গ্রুপ। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে এরই মধ্যে ব্যাংকটির পুরনো ঢাকার ইমামগঞ্জ ও মোহাম্মদপুর করপোরেট শাখার বৈদেশিক ব্যবসার লাইসেন্স (এডি লাইসেন্স) বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দুটি শাখায় এলসি (ঋণপত্র) খোলাসহ বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকটির ওপরে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা বেড়েছে ৩১টি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ছিল ৫৭টি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮টিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, নতুন বছরের শুরু থেকেই আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ধার বাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। কলমানি (আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার) থেকে এখন প্রতিদিনই ব্যাংকটিকে ধার করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ভালো ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জনতা ব্যাংক। অথচ সেই জনতা ব্যাংকে এখন সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ।’ ব্যাংকটিতে দীর্ঘদিন সুশাসন না থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, ক্রিসেন্ট গ্রুপ বিভিন্ন সরকারি তহবিল ও জনতা ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক সুবিধা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চামড়ার ভুয়া রফতানি বিল তৈরি করে সরকারের কাছ থেকে নগদ রফতানি সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু চামড়া রফতানি করলেও তারা দেশে টাকা ফেরত আনেনি। এই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হলেন দুই ভাই। একজন এম এ কাদের এবং অন্যজন আবদুল আজিজ। আবদুল আজিজ জাজ মাল্টিমিডিয়ারও কর্ণধার। তাকে এখন খুঁজছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। আর গত ৩০ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়েছে তার ভাই ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম. এ. কাদেরকে। এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
এ প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রিসেন্ট, অ্যাননটেক্সসহ অন্যান্য গ্রুপের কাছ থেকে টাকা আদায়ে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশই অর্থাৎ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকার ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে।

আনও পড়ুন: প্রতিবছর নতুন খেলাপি হচ্ছে ১১ হাজার কোটি টাকা

                 ঋণের ৮০ হাজার কোটি টাকা ফেরত পাবে না ব্যাংক

                 খেলাপি ঋণ বাড়ার নেপথ্যে কারা?