ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রতিবছর বিশেষ সনদ দেবে ব্যাংক





ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রতি বছর বিশেষ সনদ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যাংকের সেরা ১০ জন ভালো ঋণগ্রহীতার ছবিসহ তাদের ব্যবসা সফলতার সংক্ষিপ্ত চিত্র ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনেও প্রকাশ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী ভালো গ্রাহকদের জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আদায়যোগ্য সুদ বা মুনাফার ১০ শতাংশ মওকুফ সুবিধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর আগে ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহকদের এই সুবিধা দেয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভালো ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট হারে রিবেট দেওয়ার মাধ্যমে তাদের প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও ভালো ঋণগ্রহীতারা ওই সুবিধা ঠিকভাবে পাচ্ছেন না।

কারা ভালো ঋণগ্রহীতা
নতুন নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস শেষে ভালো ঋণগ্রহীতাকে চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে চলমান ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব ক্রমাগতভাবে সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে এবং মঞ্জুরিপত্র/নবায়নপত্রের শর্ত অনুসারে ওই ঋণ হিসাবে লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, তলবি ঋণগ্রহীতার সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে গৃহীত সব তলবি ঋণ অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় সমন্বিত হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এছাড়া মেয়াদি ঋণগ্রহীতার ঋণ হিসাব বিগত ১২ মাসের সব কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিত পরিশোধ হলে এবং সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত হলে একই রকম সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতার প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বর্ধিত ঋণ সুবিধাও দেওয়া যাবে।
তবে পুনঃতফসিলকৃত/পুনর্গঠিত ঋণগ্রহীতাদের জন্য কোনও সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

রিবেট/প্রণোদনা সুবিধা পাওয়ার জন্য ঋণগ্রহীতার আবেদন করতে হবে না। ব্যাংক স্ব-উদ্যোগে ভালো ঋণগ্রহীতা চিহ্নিত করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের রিবেট/প্রণোদনা সুবিধা দেবে। তবে ঋণগ্রহীতাকে রিবেট/প্রণোদনা দেওয়ার আগে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে এ মর্মে প্রত্যয়ন নিতে হবে যে, ঋণগ্রহীতার নিজ নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে অন্য কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গত ১২ মাসে বিরূপমানে শ্রেণিকৃত কোনও ঋণ ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।

ভালো ঋণগ্রহীতারা পাবেন উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী ভালো ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ সুবিধা (রিঅ্যাওয়ার্ড পয়েন্ট, ডিসকাউন্ট সুবিধা ইত্যাদি) দিতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে ভালো ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত গ্রাহকদের ছবি, প্রোফাইল ইত্যাদির সমন্বয়ে ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ বুকলেট/ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালো ঋণগ্রহীতাদের স্বীকৃতি/পুরস্কার দিয়ে সম্মাননা জানানোর ব্যবস্থা নিতে পারে। ভালো ঋণগ্রহীতাদের দেওয়া রিবেট/প্রণোদনা সংক্রান্ত তথ্য প্রতি হিসাববর্ষ শেষে পরবর্তী বছরের ৩০ এপ্রিল তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। এ নির্দেশনা ২০১৯ হিসাববর্ষ থেকে কার্যকর হবে।