বেতন নিয়ে যা বললেন বেসিক ব্যাংকের এমডি

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আলম বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিল হয়েছে। এর ফলে কর্মকর্তারা আগের চেয়ে বেতন-ভাতা কম পাবেন। এ ঘটনায় সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তারা। ব্যাংকটির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বেতন কাঠামো বাতিলের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন। সকাল থেকে প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের রুমের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা। কারও নেতৃত্ব ছাড়াই কর্মকর্তাদের এই আন্দোলন সব শাখা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
বেসিক ব্যাংকের উদ্ভূত এই পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আলম বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গত সাত বছর ধরে বেসিক ব্যাংক লোকসান গুনছে। এ সময় কর্মকর্তাদের বেশ কিছু সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও নতুন স্কেল থেকে বঞ্চিত ছিলেন এই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা নতুন স্কেলের সুবিধা ঠিকই পাচ্ছেন। এ কারণে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিল করেছে। এতে জিএম ও ডিজিএম পর্যায়ে বেতন কিছুটা কমলেও তার নিচের কর্মকর্তাদের জন্য ভালো হয়েছে। এসব নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।

বাংলা ট্রিবিউন: বেসিক ব্যাংকের বেতন কাঠামো কেন বাতিল করা হলো
রফিকুল আলম: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও এতদিন বেসিক ব্যাংক তাদের নিজেদের বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তাদের বেতন দিতো। কিন্তু অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত, যেমন সোনালী, রূপালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বেতন পান সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী। বেসিক ব্যাংকের বোর্ড বলছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি করে নতুন পে-স্কেল পায়। অথচ গত সাত বছর ধরে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা একই বেতন কাঠামোতে পড়ে আছে। এতে জিএম-ডিজিএমের নিচের স্তরের কর্মকর্তারা ঠকছেন।
বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কর্মকর্তারা আন্দোলন বা বিক্ষোভ করছেন কেন?
রফিকুল আলম: বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তরা মূলত না বুঝে আন্দোলন করছেন। তারা যদি বুঝতেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হয়েছে তাহলে তারা বোর্ডকে অভিনন্দন জানাতেন।
বাংলা ট্রিবিউন: কর্মকর্তারা এই বিষয়টি বুঝছেন না কেন?
রফিকুল আলম: যারা বুঝতে পারছেন তাদের সংখ্যা কম। এ কারণে সমস্যাটি বড় মনে হচ্ছে। আর সবাই বুঝতে পারছেন না এমনটি নয়। যারা বুঝতে পারছেন তারাও বলতে পারছেন না। কারণ, ভুল বোঝাবুঝির লোকের সংখ্যা বেশি। তবে বিকালে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা চলে গেছেন।
বাংলা ট্রিবিউন: নতুন সিদ্ধান্তের ফলে কর্মকর্তাদের মূল বেতন (বেসিক) কমবে নাকি আনুষঙ্গিক ভাতাদি কমবে?
রফিকুল আলম: এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই-এক স্তরে কর্মকর্তাদের মূল বেতন (বেসিক) বেড়ে যাবে। আর অধিকাংশ কর্মকর্তার মূল বেতন যা আছে তাই থাকবে। তবে আনুষঙ্গিক ভাতা আগের মতো পাবেন না। অবশ্য জিএম-ডিজিএম পর্যায়ে মূল বেতন কমে যাবে।
বাংলা ট্রিবিউন: আন্দোলনকারীদের মধ্যে নিচের স্তরের কর্মকর্তাই বেশি দেখা গেল, কারণ কী?
রফিকুল আলম: যেসব কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি পাচ্ছেন না, তাদের বেতন কিছুটা কমলেও কমতে পারে। হয়তো এ কারণে পদোন্নতি বঞ্চিতরা অন্যদের আন্দোলনে রাখছে। তবে যারা নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের বেতন আরও বাড়বে, কমবে না।
বাংলা ট্রিবিউন: কর্মকর্তারা চান মূল বেতন যাতে না কমে। সেটা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

রফিকুল আলম: অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতন বাড়বে, এটা নিশ্চিত থাকেন। যেটা কমবে সেটা হলো- অ্যালাউন্স কমবে। কারণ, আমাদের ব্যাংকের মূল বেতনের প্রায় সমান অ্যালাউন্স। আর রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা মূল বেতনের ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশের মতো পান অ্যালাউন্স। ফলে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মূল বেতন না কমলেও সার্বিকভাবে বেনিফিটটা কমবে।
বাংলা ট্রিবিউন: নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেপথ্য কী?
রফিকুল আলম: নেপথ্যের কারণ একটাই। সেটা হলো সরকার চায় রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংক একই কাঠামোতে আসুক। এর একটা পজিটিভ দিক হলো, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার নতুন স্কেল দেয়। যেমন, ২০০৩, ২০০৯ ও ২০১৫ সালে হয়েছে। আবার ২০২১ সালে হবে। বেসিক ব্যাংক আগে তিন বছর অন্তর অন্তর নতুন স্কেল পেতো। অথচ গত সাত বছর ধরে এই ব্যাংকের কর্মকর্তারা নতুন কোনও স্কেল পাচ্ছেন না। ফলে কর্মকর্তারা ঠকছেন। এতদিনে দুটি স্কেল পাওয়ার কথা। কিন্তু লোকসান গুনতে থাকা এই ব্যাংক নিজেই চলতে পারছে না। বেতন দেবে কীভাবে? ফলে কর্মকর্তাদের ভালোর জন্যই বেসিক ব্যাংকের বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে এক বছর পরই নতুন স্কেল পাবে এই ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কিন্তু হঠাৎ করে বেতন কমে যাওয়ায় কর্মকর্তারা এটি ভালোভাবে নিতে পারছেন না।
বাংলা ট্রিবিউন: কর্মকর্তারা আপনাকে ভুল বুঝছেন। এর ব্যাখা কী দেবেন?
রফিকুল আলম: আমাকে ভুল বোঝার কিছু নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। কর্মকর্তারা আজ সারা দিন আমার অফিসের সামনে ছিলেন। আমিও ধৈর্যসহ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সারা দিন না বুঝলেও বিকালে তারা বুঝে চলে গেছেন।
বাংলা ট্রিবিউন: কর্মকর্তারা আপনাকে অফিসে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন এমনটি কী আমরা বলতে পারি?
রফিকুল আলম: মানবিক কারণে আমি কর্মকর্তাদের আমার অফিসের সামনে থাকতে দিয়েছি। আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে আমি বুঝতাম, পুলিশকে বলতাম। কিন্তু কিছুই করিনি। যারা দলবলসহ এসেছিলেন আমি তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় কথা বলেছি। তাদের নানাভাবে বুঝিয়েছি।
প্রসঙ্গত, রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিলের একটি চিঠি ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা হয়। বাংলা ট্রিবিউনে ‘বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিল’ শিরোনামে রবিবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিলের প্রতিবাদে বেসিক ব্যাংকে বিক্ষোভ

               বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব বেতন কাঠামো বাতিল