বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নকশায় তৈরি হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ভিভিআইপি গেট। এই গেট দিয়েই প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিরা মেলার মাঠে প্রবেশ করবেন। মেলার ভেতরের বিভিন্ন সাজসজ্জা প্রায় শেষ হয়েছে। কিন্তু যে গেট দিয়ে জনসাধারণ মেলায় প্রবেশ করবে, জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে নির্মিতব্য সেই মূল গেটসহ গণভবন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার গেট তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) মেলার মাঠ ঘুরে এদৃশ্য দেখা গেছে।
সশ্লিষ্টরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাণিজ্য মেলার মাঠ সরেজমিনে দেখা গেছে, এখনও চলছে মূল গেট তৈরিসহ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অধিকাংশ স্টলে চলছে রঙয়ের কাজ। আগের বছরগুলোতে মাঠের ধুলা দূর করতে আয়োজকদের বেগ পেতে হয়েছে। বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে এবছর ধুলার রাজত্ব নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে অনেকটাই নির্ভার রয়েছে আয়োজক সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্যাভিলিয়নের মূল অকাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কোনও কোনও প্যাভিলিয়নে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ। জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান (ভিসি) ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘এবছর প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁসহ মোট স্টলের সংখ্যা ৪৪১টি। গতবছর সাধারণ স্টল ছিল ২৫০টি। এবার সাধারণ স্টলের সংখ্যা ৫০টি। এপর্যন্ত ২৩৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ২৬টি প্যাভিলিয়নের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ছিল ৫৫টি। সেগুলো এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। বরাদ্দ দেওয়া হলে সেগুলোর নির্মাণ কাজ চলবে মেলা চলাকালীন সময়ের মধ্যেই।’
ইপিবি জানিয়েছে, এবারের মেলায় শুক্র ও শনিবার কোনও সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে না। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ সবার জন্য খোলা থাকবে। টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে পূর্ণ বয়স্ক ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৮টি প্যাভিলিয়ন ও ৬টি মিনি প্যাভেলিয়ন রিজার্ভ রাখা হয়েছে। মেলায় আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোশাকধারী পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার নির্ধারিত মাঠের ভেতরের সড়কসহ অবকাঠামো নির্মাণে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ত রয়েছেন।
আয়োজক সংস্থা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া মেলা চলবে পুরো জানুয়ারি মাস। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ চীন, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান,দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, মরিশাস, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবারের মেলায় অংশ নেবে। মেলায় খাবারের দাম যেন বেশি রাখা না হয়, সে ব্যাপারে কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ থাকবে। একইসঙ্গে মেলার মাঠে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির পাশাপশি থাকবে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফরউদ্দিন বলেন, ‘মেলা শুরু হচ্ছে ১ জানুয়ারি। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। সংশ্লিষ্টরা সেভাবেই দিনরাত কাজ করছেন।’ এবছরের বাণিজ্য মেলা দর্শকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে বলেও জানান তিনি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম