বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের লেনদেন হয়নি আজ

সঞ্চয়পত্রকারিগরি ত্রুটির কারণে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সারা দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গ্রাহকদের সারা দিন বসিয়ে রেখে বিকাল ৫টার দিকে চলে যেতে বলা হয়। এতে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গ্রাহকরা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে এসেছিলেন নোয়াখালীর জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বলা হয়েছিল দুপুরের পর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিকাল চারটার পর বলা হয় আগামী রবিবার আসতে।’
জামাল উদ্দিনের মতো আরও কয়েকশ গ্রাহককে সারা দিন বসিয়ে রেখে বিকেল ৫টার দিকে চলে যেতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত তিন-চার বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘সার্ভারের সমস্যার কারণে কোনও গ্রাহক আজ সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারেননি। কারও অ্যাকাউন্টেও টাকা দিতে পারেননি।’

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টেকনিক্যাল কারণে সঞ্চয়পত্রের লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। তবে, বিকাল চারটার দিকে ঠিক হওয়ার কথা। আর টেকনিক্যাল সমস্যা যেকোনও প্রতিষ্ঠানেই হতে পারে। এতে কারও হাত থাকে না।’

জানা গেছে, সারাদেশেই সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের উত্তরাঞ্চলের একটি শাখার সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সার্ভারের সমস্যার কারণে গ্রাহকদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে, এরমধ্যেও তারা বেশ কিছু সঞ্চয়পত্র ইস্যু করেছেন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুন্নাহার বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনও সমস্যা হলেও হতে পারে। তবে, অন্য কোথাও থেকে এ ধরনের খবর পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ব্যুরো কোনও অফিস বা ডাক বিভাগের কোথায় কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, কোথাও কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানানো হতো।’

প্রসঙ্গত, এই খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেজ সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া গত ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের আসল ও সুদ বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এসব উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্র বেচাকেনা কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের পর এই প্রথম ৩০০ কোটি টাকায় নামলো সঞ্চয়পত্রের বেচাকেনা। গত নভেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকার। একক মাস হিসেবে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই হিসাব গত ৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৮ সালের নভেম্বরে বিক্রি হয়েছিলো তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। যা এই বছরের চেয়ে প্রায় ১২ গুণ বেশি।