নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা

নিত্যপণ্যের বাজার (ছবি: ফোকাস বাংলা)রাজধানীতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি বাজারগুলো বন্ধ থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লার দোকানগুলোয় নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। এতে অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। সাধারণ ছুটি সম্পর্কিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যেকোনও মূল্যে নিত্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখার কথা বলা হলেও নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কাওরান বাজারেও চলছে মোবাইল কোর্টের অভিযান। এতে রাজধানীতে নিত্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারগুলো বন্ধ থাকার কারণে আগামীতে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তখন স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য করাটা কঠিন হবে। অনেক ক্রেতাই হয়তো ফেরত যাবেন তার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি না পেয়ে। এ সময় বাজার অস্থির হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সামনে শবেবরাত, রোজাও আসছে জানিয়ে কোনাপাড়া বাজারের খুচরা বিক্রেতা সোনালী ট্রেডার্সের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, যতই বলি না কেন, খাদ্যপণ্য কেনার জন্য মানুষ ঘরের বাইরে আসবেই। তাই যেকোনও মূল্যে খাদ্যপণ্যের দোকান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, পাইকারি বলেন আর খুচরা বলেন, খোলা রাখতেই হবে। এর ব্যতিক্রম হলে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এতে বাজার অস্থির হবে। নতুন হট্টগোল সৃষ্টি হবে। তা ম্যানেজ করা কতটা সহজ বা কঠিন কাজ তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো জানেন।

একই মত পোষণ করে রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর এলাকার মুদি দোকানদার সোলায়মান হোসেন জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে তো শত শত ক্রেতা যান না। আমরা কিছু সময়ের জন্য মাল আনতে যাই। মাল বুঝে রসিদ নিয়ে টাকা পরিশোধ করি। তার পরেই চলে আসি। সব খুচরা ব্যবসায়ী তো এক সঙ্গে পাইকারি বাজারে যায় না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে খুচরা বাজার। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ক্রেতার সমাগম হয়। কাজেই বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে নিত্যপণ্যের বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খোলা রাখা উচিত।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সারাদেশের সব দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দোকান মালিক সমিতির নির্দেশ মতো শুরু থেকেই দেশব্যাপী বিপণিবিতান, শপিং মলসহ খাবার হোটেল বন্ধ রাখলেও এই নির্দেশের বাইরে রাখা হয়েছে ওষুধের দোকান, খাদ্যপণ্যের দোকান, বিভিন্ন নিত্যপণ্যের (চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবণ) দোকান যা মুদি দোকান নামে পরিচিত। সেসব দোকানের সঙ্গে খোলা রয়েছে নিত্যপণ্যের সরবরাহকারী স্বপ্ন, মিনাবাজার, আগোরা, প্রিন্সবাজার, আলমাস নামের চেইনশপগুলো। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাবার সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্যই এটি করা হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারের নির্দেশ মতো ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দোকান খুলেছে, কিন্তু এই খোলা রাখার অপরাধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এসব দোকান মালিককে জরিমানা করার খবর পাওয়া গেছে। একই খবর পাওয়া গেছে রাজধানীর কাওরান বাজারেও। মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খুললেও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে এখানে অভিযান পরিচালনা করছে, এবং জেল জরিমানা করছে। এ অবস্থায় দোকান বন্ধ রাখাই শ্রেয় বলে মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা রয়েছে খাদ্যপণ্যের দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দোকান সাধারণ ছুটির সময় চালু রাখা যাবে। কিন্তু মৌলভীবাজারে আমরা নিত্যপণ্যের পাইকারি দোকান খুলতে পারছি না। দোকান খোলার অপরাধে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে আমাদের জেল জরিমানা করছে। কাজেই আমরা দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।

তিনি জানান, রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা মৌলভীবাজার থেকে পাইকারি দরে পণ্য কিনে নেয় এবং তা খুচরা বাজারে বিক্রি করে। এখানে চাল, ডাল, তেল, চিনি, শিশুখাদ্যসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের পাইকারি দোকান রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এই মহামারি থেকে বাঁচতে কোনও অবস্থাতেই আগামী ১৫ দিন সব ধরনের দোকান খোলা রাখা ঠিক হবে না। পাইকারি বাজার বন্ধ থাকলে কোথাও পণ্য সংকট দেখা দেবে না। এতে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনও জটিলতা সৃষ্টি হবে না। তিনি জানান, এই মুহূর্তে আগামী ১৫ দিনের খাবার সংগ্রহে নাই- এমন কোনও পরিবার বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একইভাবে দেশের সব দোকানে বিক্রির জন্য আগামী ১৫ দিনের পণ্য মজুত আছে। কাজেই কোনও পাইকারি বাজার খোলা রাখার প্রয়োজন নেই বলেও জানান তিনি।

এদিকে কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পাইকারি বাজার বন্ধ থাকলে খাদ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে। কাজেই সরকারি নির্দেশমতো খাদ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খোলা রাখা উচিত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দেশে কোনও খাদ্যপণ্যেরই ঘাটতি নাই। সরবরাহ ব্যবস্থাও সন্তোষজনক। কোথাও সাপ্লাই চেইনে সংকটের খবর পাইনি। তবে পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মৌলভীবাজার কেনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তা আমি জানি না। আপনার কাছেই শুনলাম। আমি বিষয়টি দেখছি।